শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

ইসরায়েলের সংসদে পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ প্রস্তাবের পর সতর্ক করলেন মার্কো রুবিও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮:৫৪, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৮:৫৫, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েলের সংসদে পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণ প্রস্তাবের পর সতর্ক করলেন মার্কো রুবিও

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইসরায়েলের সংসদে পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণের দিকে অগ্রসর হওয়া ওয়াশিংটনের গাজা সংঘাত শেষ করার পরিকল্পনাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

ইসরায়েল সফরে রওনা হওয়ার আগে রুবিও বলেন, “এ মুহূর্তে এটি এমন কিছু নয় যা আমরা সমর্থন করতে পারি।”তিনি গাজায় নাজুক যুদ্ধবিরতি চুক্তি টিকিয়ে রাখার মার্কিন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইসরায়েল যাচ্ছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বিব্রত করতে চেয়ে দেশটির অতি-ডানপন্থী রাজনীতিকেরা একটি প্রতীকী পদক্ষেপে পশ্চিম তীর সংযুক্তিকরণের বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দেয়।
১৯৬৭ সাল থেকে ইসরায়েল দখল করে রাখা পশ্চিম তীরকে ভবিষ্যৎ স্বাধীন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দাবি করে ফিলিস্তিনিরা। গত বছর জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত (আন্তর্জাতিক বিচার আদালত বা আইসিজে) জানিয়েছিল, ইসরায়েলের দখলদারিত্ব অবৈধ।
নেতানিয়াহু এর আগেও পশ্চিম তীরের জমি সংযুক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র—ইসরায়েলের প্রধান মিত্র—ও আরব দেশগুলোর বিরক্তির আশঙ্কায় বিষয়টি এগিয়ে নেননি।

২৫-২৪ ভোটে বিল পাস
নেতানিয়াহুর জোটের সদস্যরা  পশ্চিম তীর সংযুক্তির দাবি বারবার তুললেও, এবার বিলটি উত্থাপন করেন সরকারের বাইরে থাকা সংসদ সদস্যরা।
২৫-২৪ ভোটে প্রস্তাবটি প্রাথমিকভাবে পাস হয়। ১২০ সদস্যের পার্লামেন্টে (কেনেসেট) এটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পাবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। চাইলে প্রধানমন্ত্রীও বিলটি আটকে দিতে বা বিলম্বিত করতে পারেন।

ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেনেসেটের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি ভূমির ওপর কোনও সার্বভৌমত্ব নেই।

বসতি ও আন্তর্জাতিক আইন

পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ইহুদিকে নিয়ে ১৬০টিরও বেশি বসতি গড়ে তুলেছে। সেখানে প্রায় ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করে। এই বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ, যা গত বছর আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এক পরামর্শমূলক রায়ে পুনর্ব্যক্ত হয়।

মার্কিন প্রতিক্রিয়া ও রুবিওর সফর

ইসরায়েলগামী বিমানে ওঠার সময় রুবিও বলেন, সংযুক্তিকরণ হবে “বিপরীতমুখী ও শান্তি পরিকল্পনার জন্য হুমকিস্বরূপ।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংযুক্তিকরণের বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেন।

তার এই সফরটি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও দুই বিশেষ দূতের সফরের পরপরই হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন গাজার শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ শুরু করার চেষ্টা করছে।

প্রথম ধাপ, যা যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি বাহিনীর আংশিক প্রত্যাহার ও ত্রাণ সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত করে, এই মাসের শুরু থেকে কার্যকর হয়েছে। যদিও ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই একে অপরকে চুক্তি ভাঙার অভিযোগ করেছে, তবু এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি টিকে আছে।

রুবিওও ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্সের মতোই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন: “প্রতিদিনই এর ওপর হুমকি আসবে, কিন্তু আমি মনে করি আমরা সময়সূচির চেয়ে এগিয়ে আছি। সপ্তাহান্ত পেরিয়ে আসা একটি ভালো লক্ষণ।”

দ্বিতীয় ধাপ: অন্তর্বর্তী সরকার ও নিরস্ত্রীকরণ

শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে গাজায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও হামাসের নিরস্ত্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন আক্রমণে দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।
পরবর্তীকালে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৮,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন—গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এই সংখ্যা জাতিসংঘের কাছেও নির্ভরযোগ্য হিসেবে স্বীকৃত। সূত্র : বিবিসি

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন