ফ্রান্সের সংকট কাটছেনা
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করবেন ম্যাক্রোঁ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১:২২, ৯ অক্টোবর ২০২৫

ফাইল ছবি
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন বলে জানিয়েছে এলিসি প্রাসাদ। দেশজুড়ে জোরালো গুঞ্জন চলছে—রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে কি নতুন নির্বাচনের পথে হাঁটবে ফ্রান্স? তবে প্রাসাদ জানিয়েছে, আপাতত এমন কোনো পরিকল্পনা নেই।
এর আগে বুধবার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সম্ভাবনা “ধীরে ধীরে কমছে”।
তিনি বলেন, “সংসদে এখনো এমন একটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, যারা নতুন নির্বাচন চায় না
মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে ফ্রান্সের তিনজন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। মিশেল বার্নিয়ার ও ফ্রাঁসোয়া বাইরু আত্মবিশ্বাস ভোটে পরাজিত হয়ে বিদায় নেন, আর সর্বশেষ লেকর্নু পদত্যাগ করেন সোমবার। তার পর ম্যাক্রোঁ তাঁকে অনুরোধ করেন দুই দিনের জন্য দায়িত্বে থাকতে, যাতে দলগুলোর মধ্যে অন্তত বাজেট নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তোলা যায়।
লেকর্নু টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, তার কাজ “শেষ হলেও” তিনি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেননি। তিনি সতর্ক করেন,
“যে সরকারই আসুক, ২০২৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উচ্চাভিলাষ থেকে তাকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে।”
বাজেট সংকট ও ৩.৪ ট্রিলিয়ন ইউরোর ঋণ
ফ্রান্সের বর্তমান জাতীয় ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩.৪ ট্রিলিয়ন (প্রায় ১১৪% জিডিপি)—যা ইউরোজোনে গ্রিস ও ইতালির পর তৃতীয় সর্বোচ্চ। এই ঋণ মোকাবিলা করাই নতুন প্রধানমন্ত্রীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে। বার্নিয়ার ও বাইরু উভয়েই ব্যয় সংকোচনমূলক বাজেট উপস্থাপন করে সংসদে পরাজিত হয়েছিলেন। লেকর্নু জানান, তার প্রণীত বাজেট আগামী সপ্তাহে উপস্থাপন করা হবে এবং “আলোচনার জন্য উন্মুক্ত থাকবে”।
পেনশন সংস্কার আবার আলোচনায়
২০২৩ সালের বিতর্কিত পেনশন সংস্কার আইন আবারও আলোচনায় আনতে চান লেকর্নু। তবে সংসদের বামপন্থী দল ফ্রান্স আনবাউড এর নেত্রী মাথিল্ড পানো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “একমাত্র সমাধান ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ ও ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া।”
অন্যদিকে মেরিন লে পেন ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন সরকার গঠিত হলেও তাঁর দল সেটিকে “অবশ্যই ভোটে নামাবে”।
ফ্রান্সের রাজনীতিতে এখন বিভাজন এতটাই তীব্র যে কারা নতুন সরকারকে সমর্থন দেবে তা স্পষ্ট নয়। গত বছর পর্যন্ত যে মধ্যপন্থী ও রিপাবলিকান জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল, সেটিও ভেঙে গেছে। এমন অবস্থায় ম্যাক্রোঁর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—সংসদে স্থিতিশীল সমর্থন আদায় করা।
এমনকি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্যাব্রিয়েল আতালও বলেছেন,“আমি এখন আর প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁকে বুঝতে পারছি না।”
লেকর্নু অবশ্য মনে করেন,এখনই প্রেসিডেন্ট বদলানোর সময় নয়; ফ্রান্সের প্রয়োজন স্থিতিশীল নেতৃত্ব।
ফ্রান্সের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এখন চরমে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে—দেশ নতুন প্রধানমন্ত্রী পাবে, না কি আরও গভীর সংকটে পড়বে ইউরোপের এই প্রভাবশালী গণতন্ত্র।