ইন্দোনেশিয়ায় স্কুলে বিনামূল্যের খাবার খেয়ে অসুস্থ ১১৭১ শিশু
প্রকাশ: ০১:২১, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভায় বিনামূল্যের খাবার খেয়ে স্কুলের ১ হাজারেরও বেশি শিশু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এতে দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ানতোর চালু করা ‘পুষ্টিকর খাবার কর্মসূচি’ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার থেকে বুধবারের মধ্যে ১ হাজার ১৭১ জন শিক্ষার্থী খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহেই পশ্চিম জাভা ও মধ্য সুলাওয়েসি প্রদেশে আরও অন্তত ৮০০ শিক্ষার্থী একইভাবে অসুস্থ হয়েছিল।
কী খেয়ে অসুস্থ হলো শিক্ষার্থীরা
শিশুদের দেওয়া খাবারের মধ্যে ছিল সয়াসস মুরগি, ভাজা টফু, সবজি ও ফল। অনেক শিক্ষার্থী পেটব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গের অভিযোগ করেছে। অতীতে এ কর্মসূচির খাবারে মেয়াদোত্তীর্ণ সস ও একবার ভাজা হাঙরের মাংস ব্যবহারের কারণে খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছিল।
জাতীয় পুষ্টি সংস্থার প্রধান দাদান হিন্দায়ানা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক খাদ্যে বিষক্রিয়ার পেছনে স্থানীয় পুষ্টি সেবাদানকারী ইউনিটের (এসপিপিজি) ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’ দায়ী। ফলে ওই এলাকায় ইউনিটের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।
কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন
প্রেসিডেন্ট সুবিয়ানতো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই কর্মসূচি চালু করেন। এর লক্ষ্য ছিল দেশের প্রায় ৮ কোটি শিক্ষার্থীকে দুপুরে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, যাতে শিশুদের অপুষ্টি দূর হয়।
কিন্তু এ পর্যন্ত এ কর্মসূচির খাবার খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় ৬ হাজারেরও বেশি শিশু আক্রান্ত হয়েছে। ফলে কয়েকটি বেসরকারি সংগঠন কর্মসূচি স্থগিতের দাবি তুলেছে। তবে সরকার বলছে, “এটি বন্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই।”
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্কুল-খাদ্য কর্মসূচি
ইন্দোনেশিয়ার এই কর্মসূচির বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার, যা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ বছরই কেবল বরাদ্দ হয়েছেে এক হাজার কোটি ডলারের বেশি। তুলনায় ভারত ১২ কোটি শিশুর জন্য বছরে ১৫০ কোটি ডলার এবং ব্রাজিল ৪ কোটি শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় একই অঙ্ক ব্যয় করে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এত বিপুল ব্যয়ের কর্মসূচি দুর্নীতির ঝুঁকিতে ভরা। ইন্দোনেশিয়ার অডিট বোর্ডের গবেষক মুহাম্মদ রাফি বাকরি বলেন, “এত বড় বাজেট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জন্য সোনার খনি হয়ে উঠতে পারে।”
বিনামূল্যে খাবার বিতরণ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলার কথা থাকলেও ইন্দোনেশিয়ায় এটি এখন স্বাস্থ্যঝুঁকি, খাদ্য নিরাপত্তা ও দুর্নীতি আশঙ্কার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান অসুস্থতার ঘটনায় সরকারের পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।