ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিকুনগুনিয়া প্রাদুর্ভাব
বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভ্রমণ সতর্কতা
বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪:১৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৫:০২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) সর্বশেষ ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, সোমালিয়া এবং শ্রীলঙ্কায় চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব দেশে ভ্রমণকারীদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকাস্থ মার্নিন দূতাবাসের ভেরিফাইড ফেসবুকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চিকুনগুনিয়ার কারণে বাংলাদেশকে ভ্রমণকারীদের স্বাস্থ্য সতর্কতার দ্বিতীয় স্তরে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
ভ্রমণ সতর্কতা স্তর
- সিডিসি ভ্রমণ সতর্কতাকে চার ধাপে ভাগ করেছে—
- লেভেল ৪: অত্যাবশ্যক না হলে ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন।
- লেভেল ৩: অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ পুনর্বিবেচনা করুন।
- লেভেল ২: অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন।
- লেভেল ১: সাধারণ সতর্কতা মেনে চলুন।
বাংলাদেশ, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, সোমালিয়া ও শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণের ক্ষেত্রে লেভেল ২–৩ পর্যায়ের বিশেষ সতর্কতা মানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কী এই চিকুনগুনিয়া?
চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস প্রজাতির মশার কামড়ে ছড়ায়। উপসর্গ সাধারণত সংক্রমণের ৩–৭ দিনের মধ্যে শুরু হয়।
- হঠাৎ জ্বর
- তীব্র জয়েন্ট ব্যথা
- মাথাব্যথা, মাংসপেশীর ব্যথা
- জয়েন্ট ফুলে যাওয়া
- ত্বকে র্যাশ
যদিও বেশিরভাগ রোগী এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন, তবে কারও কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্ট ব্যথা থেকে যেতে পারে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
- নবজাতক, বিশেষ করে প্রসবকালে যদি মা সংক্রমিত থাকেন
- ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণরা
- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তি
- যদিও মৃত্যু বিরল, গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে।
প্রতিরোধ ও সুরক্ষা
- বর্তমানে চিকুনগুনিয়ার কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তাই প্রতিরোধই মূল ভরসা।
- মশার কামড় এড়াতে প্রতিদিন ইনসেক্ট রিপেলেন্ট ব্যবহার করুন।
- ফুলহাতা জামা ও প্যান্ট পরুন।
- মশারি ও জানালায় জালি ব্যবহার করুন।
- এসি বা সুরক্ষিত কক্ষে অবস্থান করুন।
- ভ্যাকসিন ও গর্ভবতী নারীদের নির্দেশনা
সিডিসি জানিয়েছে, আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমণকারীদের চিকুনগুনিয়া ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ভ্যাকসিন প্রসবের পর পর্যন্ত স্থগিত রাখা উচিত। ঝুঁকি বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যতিক্রম হতে পারে।
কারণ, প্রসবের সময় মা সংক্রমিত হলে নবজাতকের মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
- উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা (জ্বর ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণ)
- পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ
- বিশ্রাম
- দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন
ভ্রমণকারীদের করণীয়
বাংলাদেশ, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, সোমালিয়া ও শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণের আগে ভ্যাকসিন নেওয়া, ভ্রমণকালে মশা থেকে সুরক্ষা নেওয়া এবং ভ্রমণ শেষে জ্বর বা জয়েন্ট ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সিডিসি।