চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্য
ভয়ংকর ও দুরারোগ্য হান্টিংটন’স রোগে প্রথমবার সফল চিকিৎসা
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:৩২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে নির্মম ও ভয়াবহ স্নায়বিক রোগগুলোর একটি হান্টিংটন’স ডিজিজ। এবার এই প্রথমবারের মতো সফলভাবে এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছে বলে জানালেন চিকিৎসকরা। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল) এর গবেষক প্রফেসর সারা টাব্রিজি ও প্রফেসর এড ওয়াইল্ড নেতৃত্বে পরিচালিত আন্তর্জাতিক এক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, নতুন জিন থেরাপি রোগের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ধীর করতে সক্ষম হয়েছে।
রোগীদের জীবনে আশার আলো
সাধারণত এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয় ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং দুই দশকের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে। তবে নতুন চিকিৎসা প্রয়োগে রোগের অবনতি এতটাই ধীর হয়েছে যে, এক বছরের পরিবর্তে চার বছরে একই পর্যায়ে পৌঁছায়। এর মানে রোগীরা আরও কয়েক দশক ভালো মানের জীবনযাপন করতে পারবেন।
প্রফেসর টাব্রিজি বলেন, “আমরা কোনোদিন কল্পনাও করিনি যে রোগের অগ্রগতি এতটা ধীর করা সম্ভব হবে। এটি এক কথায় চমকপ্রদ।”
চিকিৎসা কীভাবে কাজ করে
চিকিৎসাটি এক ধরনের জিন থেরাপি যা একবারের ইনফিউশনে মস্তিষ্কে প্রয়োগ করা হয়।
প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল, যেখানে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা ধরে মাইক্রোক্যাথেটারের মাধ্যমে ভাইরাস বহনকারী ডিএনএ ইনফিউস করা হয়।
নিরাপদ ভাইরাসটি নিউরনে প্রবেশ করে মাইক্রোআরএনএ উৎপাদন শুরু করে, যা বিকৃত হান্টিংটিন প্রোটিন তৈরির জিনগত নির্দেশনা আটকায়।
এর ফলে স্নায়ুকোষে ক্ষতিকর প্রোটিনের মাত্রা স্থায়ীভাবে কমে যায় এবং কোষগুলো নিজেরাই টিকে থাকতে সক্ষম হয়।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের অনেকে ইতোমধ্যে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন অনুভব করেছেন। একজন রোগী, যিনি আগেই অবসরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, আবার কাজে ফিরতে পেরেছেন। অন্যরা হুইলচেয়ারে বসার কথা থাকলেও এখনো হাঁটাচলা করছেন।
৩০ বছর বয়সী জ্যাক মে-ডেভিস, যার পরিবারে এই রোগ বংশানুক্রমে রয়েছে, বলেন—“অবিশ্বাস্য এই সাফল্য আমাকে ভবিষ্যতের নতুন আলো দেখাচ্ছে। আমি এখন মনে করি আমার জীবন অনেক দীর্ঘ হতে পারে।”
২৯ জন রোগীকে নিয়ে চালানো ট্রায়ালে দেখা গেছে, তিন বছর পরেও রোগের অগ্রগতি গড়ে ৭৫% ধীর হয়েছে।
রোগীর স্পাইনাল ফ্লুইডে নিউরোফিলামেন্টের মাত্রা কমেছে, যা স্নায়ুকোষ রক্ষার স্পষ্ট প্রমাণ।
চিকিৎসাটি নিরাপদ বলে প্রমাণিত হলেও কিছু রোগীর ভাইরাসজনিত প্রদাহ, মাথাব্যথা ও বিভ্রান্তি দেখা দেয়, যা ওষুধ বা স্টেরয়েডে নিয়ন্ত্রণে আসে।
যদিও চিকিৎসাটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং জটিল সার্জারির কারণে সবার জন্য সহজলভ্য নয়, তবুও এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৬ সালের শুরুতে এটির লাইসেন্স আবেদন করা হবে এবং একই বছরে বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রফেসর ওয়াইল্ড আশা প্রকাশ করেছেন, একবার চিকিৎসা গ্রহণ করলে রোগীর আজীবনের জন্য সুরক্ষা মিলবে, কারণ মস্তিষ্কের নিউরন শরীরের অন্যান্য কোষের মতো সহজে প্রতিস্থাপিত হয় না।
হান্টিংটন’স রোগে আক্রান্ত হাজারো পরিবারে এ চিকিৎসা নতুন আশার আলো ছড়িয়েছে। যদিও চিকিৎসাটি ব্যয়বহুল এবং সবার নাগালে আসতে সময় লাগবে, তবুও এটি ভবিষ্যতে প্রতিরোধমূলক ট্রায়াল শুরু করার পথ প্রশস্ত করেছে—যেখানে জিন বহনকারী কিন্তু এখনো লক্ষণ প্রকাশ না হওয়া মানুষদেরও রোগের কবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
এটি নিঃসন্দেহে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সাফল্য।