বিদায় মিগ-২১: ছয় দশকের কিংবদন্তির বিদায়
বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৬:০২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারতীয় বায়ুসেনার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। শুক্রবার চণ্ডীগড় বিমানঘাঁটিতে এক আবেগঘন অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিল যুদ্ধবিমান মিগ-২১। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং একে শুধুমাত্র যুদ্ধবিমান নয়, বরং ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্ব ও কৌশলগত সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেন। তার ভাষায়, “মিগ-২১ শুধু একটি যন্ত্র নয়, এটি জাতীয় গর্ব, আত্মবিশ্বাস আর সাহসিকতার প্রতীক, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে।”
ইতিহাসের পাতায় মিগ-২১
মিগ-২১ ছিল ভারতের প্রথম সুপারসনিক যুদ্ধবিমান। ১৯৬০-এর দশকে প্রায় ৮৭০টি মিগ-২১ কেনা হয়েছিল, যা কয়েক দশক ধরে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করেছে।
রাজনাথ সিং বলেন, মিগ-২১ দীর্ঘ সময় ধরে বহু বীরত্বগাথার সাক্ষী হয়ে রইল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, কারগিল সংঘাত, বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক কিংবা অপারেশন সিন্ধুর মতো ঐতিহাসিক অভিযানে এই বিমান ভারতের মান বাড়িয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে মিগ-২১ দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। তাই এই বিদায় কেবল একটি বিমানের নয়, বরং আমাদের জাতীয় গৌরব, স্মৃতি ও সাহসের যাত্রার বিদায়।”
২০১৯ সালের বালাকোট এয়ারস্ট্রাইক—প্রতিটি বড় সামরিক অভিযানে মিগ-২১-এর অবদান ইতিহাসে গৌরবময় অধ্যায় হয়ে আছে।
রাজনাথ সিং স্মরণ করিয়ে দেন, প্রতিটি অভিযানে এই যুদ্ধবিমান ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। তাই এর বিদায় শুধু একটি বিমানের অবসর নয়, বরং একটি জাতীয় যাত্রার সমাপ্তি।
আবেগঘন শেষ উড্ডয়ন
শুক্রবারের অনুষ্ঠানে শেষবারের মতো আকাশে উড়ে ২৩ নম্বর স্কোয়াড্রন “প্যান্থারস”-এর মিগ-২১। ভারতীয় বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ. পি. সিং নিজেই “বাদল ৩” কলসাইন নিয়ে শেষ sortie পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে তোলে:আকাশগঙ্গা প্যারাশুট টিমের ৮,০০০ ফুট উচ্চতা থেকে লাফ,তিন বিমানের বাদল ও চার বিমানের প্যান্থার ফরমেশন ফ্লাইপাস্ট,সুর্যকিরণ অ্যারোবেটিক টিমের কসরত ও এয়ার ওয়ারিয়র ড্রিল টিমের নিখুঁত প্রদর্শনী।
শেষে আকাশে দেওয়া হয় বিদায়ী স্যালুট—যোদ্ধা ঘোড়ার প্রতি জাতির শ্রদ্ধা।
গৌরব ও বিতর্কের সমান্তরাল ইতিহাস
যদিও মিগ-২১ অসংখ্য সাফল্যের সাক্ষী, তবে দুর্ঘটনার ইতিহাসও কম নয়। বহু পাইলটকে প্রাণ দিতে হয়েছে, যার কারণে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তবুও ভারতীয় বায়ুসেনার চোখে এটি ছিল আস্থার প্রতীক—এক যুদ্ধসঙ্গী, যে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন এয়ার চিফ এস. পি. ত্যাগী, বি. এস. ধানোয়া এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা সহ বহু বিশিষ্টজন। ভারতীয় বায়ুসেনা তাদের সরকারি এক্স পোস্টে লিখেছে—“ছয় দশকের সেবা, অসংখ্য সাহসিকতার গল্প, জাতির গর্বকে আকাশে বহন করা এক যুদ্ধঘোড়া। মিগ-২১ সর্বদা আমাদের স্মৃতিতে অমলিন থাকবে।”
যুদ্ধবিমান হলেও মিগ-২১ কেবল ইঞ্জিন আর ধাতব খোলস নয়। এটি ভারতের সাহস, আত্মবিশ্বাস ও গৌরবের প্রতীক। বিদায়ের মুহূর্তে মিগ-২১ ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষার ইতিহাসে অমর এক কিংবদন্তি হয়ে রইল।