সংসদ এলাকায় হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবন
বিশেষ প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭:৫৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২০, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিজয়ী দলের প্রধানমন্ত্রীর জন্য একটি নতুন সরকারি বাসভবন নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার ভেতরেই এই বাসভবন তৈরি করা হবে। এতে করে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ও সংসদীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুবিধা দুটোই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের জন্য নির্ধারিত দুটি বাসভবনকে একীভূত করে এটিকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি দুটি ভবনের মধ্যে সহজ যোগাযোগের জন্য দুই স্তরবিশিষ্ট একটি করিডর নির্মাণ করা হবে।
ভবন দুটি সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে, আসাদগেটের দিকে অবস্থিত। এই ভবনগুলো দোতলা, একই নকশায় তৈরি এবং চারপাশে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা। সামনে খোলা জায়গা ও বাগান থাকায় এটি নিরাপত্তা ও নান্দনিকতার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছিল গণভবন। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় গণভবনে প্রবল ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং পরবর্তীতে সেটিকে "জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর" হিসেবে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলের নানা ঘটনা—পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, শাপলা ম্যাসাকার, ভোট কারচুপি ইত্যাদি—ঐতিহাসিক তথ্য আকারে সংরক্ষণ করা হবে। নভেম্বরের মধ্যে জাদুঘরটি উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।
গত ৭ জুলাই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বাসভবন নির্ধারণের কাজ শুরু করে। শুরুতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও হেয়ার রোডের বাংলো বাড়িগুলো নিয়ে আলোচনা হলেও পরে সংসদ চত্বরের ভেতরের এই দুটি ভবনকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সরকারি প্রতিনিধিদল ভবন দুটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে। প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব নজরুল ইসলাম, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান এবং স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুব উস সামাদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এর পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ভবন ও আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণ করেছেন।
গণভবনের পরিবর্তে জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন নির্ধারণ শুধু নিরাপত্তাজনিত কারণে নয়, রাজনৈতিক নতুন বার্তাও বহন করছে। এটি অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন ব্যবস্থার প্রতীক, যেখানে গণভবন স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরিত হয়ে ইতিহাস সংরক্ষণ করবে, আর সংসদ চত্বরে প্রধানমন্ত্রী থাকবেন সংসদের কেন্দ্রবিন্দুতে।