শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

বিদেশেও যাচ্ছে কুষ্টিয়ার ‘তিলের খাজা’ 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ২০:৫৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২২:৪৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিদেশেও যাচ্ছে কুষ্টিয়ার ‘তিলের খাজা’ 

দেশজুড়ে জনপ্রিয় কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী তিলের খাজা এখন বিদেশেও যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও ক্রমেই বাড়ছে সুস্বাদু এই মুখরোচক মিষ্টান্নের চাহিদা।

চিনি ও তিল দিয়ে হাতে তৈরি কুষ্টিয়ার এই খাজা স্বাদ ও গঠনে অনন্য। কুষ্টিয়ায় তো বটেই, দেশের বিভিন্ন ছোট বড় মিষ্টির দোকান, রাস্তাঘাট, যাত্রী ছাউনিতে অহরহ বিক্রি হচ্ছে এই খাবার।

স্থানীয়রা জানায়, কুষ্টিয়ার তিলের খাজার ঐতিহ্য প্রায় ১৫০ বছরের। সম্প্রতি এটি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যা এর সাংস্কৃতিক ও আঞ্চলিক গুরুত্বকে প্রমাণ করে।

তারা আরও জানায়, তিলের খাজার কারখানাগুলো ‘লালন ফকিরের’ আখড়াবাড়ির আশেপাশেই গড়ে উঠেছিল। এমনকি অনেক বাউল সাধক দাবি করেন, প্রায় দেড় শতাব্দী আগে লালন সাঁই নিজেই খাজা নিয়ে একটি গান রচনা করেছিলেন। যদিও তা প্রমাণিত নয়, লোককথা ও গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সেই স্মৃতি বাঁচিয়ে রেখেছে।

প্রস্তুতকারকরা জানায়, তিলের খাজা তৈরির প্রক্রিয়া অত্যন্ত শ্রমসাধ্য। প্রথমে চিনি ও দুধ সেদ্ধ করে নিখুঁত ঘনত্বে আনা হয়। তারপর ঠাণ্ডা করে শক্ত ব্লক বানানো হয়। কাঠ বা বাঁশের ফ্রেমে ঝুলিয়ে রেখে বারবার টানা হয়। হালকা বাদামি থেকে সাদা রঙে রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীরা কায়দা করে ভেতরের স্তরগুলো ফোলান, পরে মাপে কেটে খোসা ছাড়ানো তিল ছিটিয়ে প্যাকেজিং করেন

কুষ্টিয়ার দুটি প্রধান কারখানায় প্রতি রাতেই প্রায় ২৫০ কেজি তিলের খাজা তৈরি হয়, যা ভোরে সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।

তবে আর্থিক সংকট, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার অভাব আর কাঁচামালের দাম বাড়ায় এই শিল্প হুমকির মুখে বলে জানান কারখানার মালিকরা।

ইতিহাসে দেখা যায়, একসময় সব খাজার কারখানা লালন আখড়াবাড়ির চৌরিয়া এলাকায় ছিল। এখন হাতে গোনা কয়েকটি রয়ে গেছে, যেগুলোর কিছু প্রায় ৫০ বছরের পুরনো। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে অন্যান্য জেলাতেও নতুন উৎপাদনকেন্দ্র গড়ে উঠছে।

একসময় শীতকালীন মৌসুমী মিষ্টি হলেও এখন সারা বছর খাজা তৈরি হয়। রাতে প্রস্তুতি আর দিনে বিক্রি চলে। শীতের মৌসুমে কারখানাগুলোতে প্রায় টানা ২৪ ঘণ্টা কাজ চলে।

স্থানীয়রা জানায়, যদিও জিআই তালিকাভুক্তি এক বড় মাইলফলক, তবু এটি এখনও ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবেই রয়ে গেছে। পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতা ও বিনিয়োগের অভাবে সমস্যা রয়েই গেছে।

কুষ্টিয়া রেলস্টেশনে এক দশকের বেশি সময় ধরে তিলের খাজা বিক্রি করছেন ফেরিওয়ালা রতন ঘোষ। তিনি বলেন, “আমরা গর্বিত যে পুরো দেশ কুষ্টিয়াকে তিলের খাজার জন্য চেনে। কিন্তু আসল কথা হলো, আমরা টিকে থাকতেই হিমশিম খাচ্ছি। খরচ বাড়ছে, কিন্তু কোনো সহায়তা নেই। সরকার যদি আমাদের আরও সহযোগিতা করে, এই মিষ্টিই বাংলাদেশকে বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করাতে পারে।”

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন