জুলাই সনদ ও গণভোট ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চায় জামায়াত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২০, ১ নভেম্বর ২০২৫
রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংবিধান সংস্কার আদেশ‑২০২৫ কার্যকর করার প্রসঙ্গ এবং গণভোট আয়োজনের বিষয়টি এখন আলোচনার প্রধান বিষয়। জামায়াতে ইসলামী দাবি জানিয়েছে, আদেশটি দ্রুত জারি করা হলে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজন সম্ভব হবে এবং তা পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করবে। এই প্রেক্ষাপটে জামায়াত গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। তবে এখনো নির্দিষ্ট সময়সূচি দেওয়া হয়নি।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, 'আমরা পরিস্থিতি নজরে রাখছি। সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করছি। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার—শুধু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেই হবে না, সংবিধান সংস্কারের আদেশ কার্যকর হওয়া দরকার। প্রশাসন ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের বিষয়টি পরিষ্কার।' তিনি আরও বলেন, 'বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিচ্ছে এবং বলা হচ্ছে, তারা সংবিধান সংস্কার চায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তারা সংস্কারের পক্ষে নয়। তাই আমাদের দাবি একান্ত সুস্পষ্ট।'
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের ভাষ্য অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজন করলে সংবিধান সংস্কারের গুরুত্ব ক্ষুণ্ণ হবে। তিনি বলেছেন, 'সংস্কারের আদেশ কার্যকর না হলে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজন করা সম্ভব নয়। এতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই সময় নষ্ট করা যাবে না।'
জামায়াত এই দাবিতে সরকারের প্রতি সতর্ক বার্তা দিয়েছে যে, সংবিধান সংস্কারের আদেশ জারি না হলে এবং গণভোটের প্রস্তুতি না হলে তারা মাঠে 'প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি' নিতে বাধ্য হবে। দলটির নেতারা মনে করছেন, আদেশ ও গণভোটের যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে এবং তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর।
এই পরিস্থিতিতে নয়টি রাজনৈতিক দল-মঞ্চ জামায়াতের সঙ্গে একযোগে অবস্থান নিয়েছে। তারা সরকারি সিদ্ধান্ত, আদেশ জারি এবং গণভোটের তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের এই অবস্থান কেবল একটি দলীয় দাবিই নয়, বরং দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া, সংবিধান সংস্কার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আরও বলেছেন, 'সংস্কার নিশ্চিত হওয়ার আগে নির্বাচন আয়োজন করলে তা জনগণের আস্থা হারাবে। আমাদের লক্ষ্য হলো সংবিধান ও গণভোটের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।' তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সরকার যদি আদেশ কার্যকর করতে সময় নষ্ট করে, তাহলে নভেম্বরের মধ্যে গণভোটের সম্ভাবনা সীমিত হয়ে যাবে এবং জামায়াত বাধ্য হয়ে মাঠে সমাবেশ ও মিছিল শুরু করবে।
বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই বিষয় নিয়ে মতানৈক্য স্পষ্ট। কমিশন ইতিমধ্যে সুপারিশ দিয়েছে, কিন্তু তা কার্যকর করতে হলে সরকারের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ প্রয়োজন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে সরকারের পদক্ষেপ, সংবিধান সংস্কার আদেশের কার্যকারিতা এবং গণভোটের তারিখ নির্ধারণই দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ার জন্য সিদ্ধান্তমূলক হয়ে উঠবে।
জামায়াতে ইসলামী বলছে, সংবিধান সংস্কারের আদেশ কার্যকর হওয়া এবং তার ওপর ভিত্তি করে গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে নির্বাচন হবে গ্রহণযোগ্য। তারা জানিয়েছেন, তা না হলে তারা বাধ্য হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচি ও সমাবেশ শুরু করবে। এই অবস্থায় সরকারের পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।
