ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্যের আহ্বান সাকির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:৩৬, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৫২, ১ নভেম্বর ২০২৫
 
						
									গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা এই দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থ ও মুক্তির জন্য লড়াই করি। প্রত্যেক নাগরিকের নাগরিক মর্যাদার ভিত্তিতে রাষ্ট্র গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। শ্রেণিগত শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে মানবমুক্তির যে স্বপ্ন ১৯৭১ সালে জেগেছিল, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আমরা আছি।’
মুক্তিকামী সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের তিন দিনব্যাপী পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এই আহ্বান জানান। ঢাকায় শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বক্তব্য রাখেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশে গণতন্ত্র থাকলেও খেটে খাওয়া মানুষের ন্যায্য হিস্যা অনুপস্থিত। তিনি বলেন, ‘সম্পদের বণ্টন মুষ্টিমেয় দখলদারের হাতে। ভোট গণতন্ত্রের ভিত্তি হলেও শুধু ভোট গণতন্ত্র নয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্র টেকে না—তা তখন ক্ষমতাসীনদের হাতিয়ার হয়ে পড়ে। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ তারই প্রমাণ।’
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো বদলানো ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ক্ষমতা কাঠামো স্বৈরাচারকে শক্তিশালী করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্ট ছাড়া সংবিধান বা সংস্কার টেকসই হয় না। এজন্য দরকার নির্বাচন ও ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য। একক দল রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব নিতে চাইলে তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না এবং সংঘাতের সৃষ্টি করবে। এই সুযোগে ফ্যাসিস্ট শক্তি ও তাদের মিত্ররা ফের মাথাচাড়া দিতে পারে—এটা রোধে জাতীয় ঐকমত্য অপরিহার্য।’
‘শ্রমিক-কৃষক, খেটে খাওয়া, নিপীড়িত ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায্য হিস্যা চাই’—এই দাবিকে সামনে রেখে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শহীদ উমর নুরুল আফসারের স্ত্রী ফারজানা আক্তার রানী ও শহীদ মো. নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা।
সম্মেলন চলবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত, যেখানে সারা দেশ থেকে আগত কাউন্সিলর ও পর্যবেক্ষকরা অংশ নিচ্ছেন।
নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘গণসংহতি আন্দোলনের একমাত্র গর্ব— আমরা কখনো ইতিহাসের ডাক অস্বীকার করিনি। বিশ্বের ফ্যাসিবাদের উত্থানের বিপরীতে আজ মুক্তিকামী সামাজিক গণতন্ত্রের ঐক্য প্রয়োজন।’
সম্মেলনে রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আব্দুর রশিদ নীলু শহীদদের স্মরণ করে বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও আহতদের দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে।’
তাসলিমা আখতার বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের অর্জন সংরক্ষণে গণতান্ত্রিক সংবিধান ও প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ প্রয়োজন।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ন্যায়ের জয় হবেই, সত্যের জয় হবেই। আমাদের সকলের আগে বাংলাদেশ।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশ রক্ষার দায়িত্ব এখন আমাদের সবার। ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেতে একটি গুণগত মানসম্পন্ন নির্বাচন জরুরি।’
এছাড়া ভিডিও বার্তায় শহীদুল আলম এবং উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন সাইফুল হক, নুরুল হক নুর, আরিফুল ইসলাম আদীব, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মজিবুর রহমান মঞ্জু, মাহরুখ মহিউদ্দিন, সৈয়দ এহসানুল হুদা, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সৈয়দ হাসিবুদ্দীন হোসেন, মাসুদ রানাসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতা।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ফিরোজ আহসান, নাজার আহমেদ, কেরামত আলী, রাজনৈতিক পরিষদের ফিরোজ আহমেদ, হাসান মারুফ রুমী, মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর বাচ্চু ভূইয়া, দীপক রায়, অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা— নারী সংহতির শ্যামলী শীল, অপরাজিতা দেব, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির মিজানুর রহীম চৌধুরী, কৃষক মজুর সংহতির আব্দুল আলীম, যুব ফেডারেশনের গোলাম মোস্তফা ও জাহিদ সুজন, ছাত্র ফেডারেশনের মশিউর রহমান খান রিচার্ড ও সৈকত আরিফ প্রমুখ।

 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													