ইমরান খানকে কি হত্যা করা হতে পারে
প্রকাশ: ১৯:৩৪, ২ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০২:১৭, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
মঞ্জুরে খোদা টরিক
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের একটি সেনাবাহিনী আছে, কিন্তু পৃথিবীতে সেনাবাহিনীরও একটা দেশ আছে, আর সেটা হচ্ছে পাকিস্তান। পাকিস্তান হচ্ছে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, ধর্মান্ধতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সংকট সেখানে ধারাবাহিক ও ঐতিহাসিক। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানই সম্ভবত ক্ষমতায় বেশিদিন টিকে ছিলেন, সেটাও মাত্র ৪ বছর, কিন্তু তিনিও তার মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। ক্রিকেটার থেকে তিনি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ও ছত্রছায়ায় দল গঠন করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। বর্তমান সেনাপ্রধান আসিম মুনির ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী। তার সাথে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণেই তাকে রাজপ্রাসাদ থেকে জেলখানার বাসিন্দা হতে হয়েছে।
ইমরান খানকে কেন ক্ষমতা থেকে উৎখাত হতে হলো?
ইমরান খান কিছুটা দ্রুতই রাশিয়ার দিকে ঝুঁকেছিলেন। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে দেখা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ভারতের পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করে বলেছিলেন, ভারত আমেরিকার কাছ থেকে অস্ত্র কিনছে, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে। তারা যদি স্বাধীনভাবে এই কাজ করতে পারে তাহলে পাকিস্তান কেন তা করতে পারবে না? এমন কথাই হয়েছিল তার কাল? আর সবচেয়ে বড় বিষয় সেনাবাহিনীর সাথে দ্বন্দ্বই সেদিন তার ভাগ্যকে নির্ধারণ করে দিয়েছিল।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী ছিল?
১। অভিযোগ ছিল বিদেশে থেকে পাওয়া উপঢৌকন তোষাখানায় জমা না দেওয়া,
২। রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁস বা গায়েব করা,
৩। নিজেদের অর্থ-সম্পদ গোপন ও অনিয়মের অভিযোগ ইত্যাদি।
এই তিনটি মামলায় দুটিতে তার একটিতে ১৪ বছর আরেকটিতে ১০ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। মানে বাকি জীবন জেলে কাটাতে হবে! তাহলে তার দলকেও কেন নিষিদ্ধ করা হলো?
তার দলকেও সন্ত্রাস, নাশকতা ও দেশবিরোধী কাজের অভিযোগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইমরানের দল সর্বশেষ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেনি, মার্কাও বাতিল করা হয়েছে। তবে তার দল পিটিআই দলীয় ব্যানারে নির্বাচন করতে না পারলেও এই দলের সদস্যরা স্বতন্ত্র ও এদল, সেদল থেকে নির্বাচন করেছেন। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও তাদের সরকার গঠন করতে দেওয়া হয়নি।
ইমরান খানের খুনের গুজব ছড়লো কীভাবে?
আফগানিস্তান টাইমস একটি সংবাদ করেছে যে, ইমরান খানকে জেলখানার মধ্যে হত্যা করা হয়েছে। আর এই সংবাদ উসকে দিয়েছে যখন ইমরান খানের ছেলে ও বোনরা অভিযোগ করেছেন যে, তাদের কয়েক সপ্তাহ ধরে তার সাথে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না এবং তারা ইমরান খানের কোনো সংবাদ পাচ্ছেন না।
পাকিস্তানের মিডিয়া বলছে, এটা একটা গুজব। কিন্তু তার দলের সদস্য-সমর্থকরা সেটা মানতে নারাজ। তারা বলছেন, তাহলে তাদের সাথে কেন দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না? তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সমাবেশ ও অবস্থান করে বিক্ষোভ করছেন।
তাহলে ইমরানের কোনো সংবাদ কেন তার পরিবার পাচ্ছে না?
এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। জেল কর্তৃপক্ষ বলছে, জননিরাপত্তার স্বার্থে ও রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে তার সাথে এখন দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগ উঠছে যে, ইমরান খানের বোন ভারতের একটি মিডিয়াকে নাকি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সে কারণে সরকার ক্ষুব্ধ হয়েছে।
ইমরান খানকে কি হত্যা করা হতে পারে?
পাকিস্তানের ইতিহাসে এমন ঘটনা আছে যে কারণে পাকিস্তানের জনগণ মনে করে সেনাবাহিনী এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। জেনারেল জিয়াউল হক জুলফিকার আলী ভুট্টোকে এক প্রহসনের মামলা ও বিচারে ফাঁসি দিয়েছিল। জিয়াউল হককেও বিমান দুর্ঘটনায় হত্যা করা হয়েছিল। বেনজির ভুট্টোকে নির্বাচনী প্রচারণায় বোমাহামলায় হত্যা করা হয়েছিল। পাকিস্তানে ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতির ইতিহাস অনেক পুরনো যে কারণে এমন ধারণা অমূলক নয়।
লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
* মতামত লেখকের নিজস্ব
