ইমরান খান কি হবেন পাকিস্তানের পরবর্তী ভুট্টো?
প্রকাশ: ১৯:১৮, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:২০, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
মঞ্জুরে খোদা টরিক
পাকিস্তানের শাসক, সেনাবাহিনী আজো ভুলতে পারেনি একাত্তরের স্মৃতি, ক্ষরণ-বেদনা। তারা আবারো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ‘গাদ্দার’ বলে অভিহিত করল!
১. বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার নেতা শেখ মুজিবকে গাদ্দার বলায় অন্তর্বর্তী সরকার কি এর প্রতিবাদ করবে? পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে কি তলব করে বিষয়টি জানাবে?
২. অন্তর্বর্তী সরকারে ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াতসহ ২/৩ জন মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তারা কি প্রতিবাদ জানাবেন? আহা! ক্ষমতা বড়ই আরামের বিষয়? অথচ দেশটা স্বাধীন না হলে...।
৩। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বলছে, ইমরান খান ভারত, আফগানিস্তানের সাথে যোগাযোগের জন্য অভিযুক্ত। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলেননি? বিষয়টি ইন্টারেস্টিং নয়?
৪. একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে পাকিস্তান তাদের অবস্থান এতটুকু পরিবর্তন করেনি! তাদের এদেশীয় সহযোগীদের কথাবার্তায় সে কথা স্পষ্ট।
৫. বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকার সমালোচনায় করায় তার বিরুদ্ধে তাদের ক্রোধ-ক্ষোভ কতটা তা আবারো পরিষ্কার পাক সেনাবাহিনীর আইএসপিআরের কালকের দেড় ঘণ্টার বক্তব্যে। পাকিস্তানের ডন পত্রিকা শিরোনামই করেছে, ‘Who do you think you are?’: DG ISPR lashes out at Imran Khan’s ‘anti-army rhetoric’। মানে তুমি কে হে? ‘তুমি নিজেকে কে মনে করো?’: ‘সেনাবিরোধী বক্তব্যের’ তীব্র সমালোচনা করলেন আইএসপিআরের ডিজি (এর খাস বাংলা করলে মানে হবে অন্যরকম)। আর তাদের বাংলাদেশি অনুসারীরা সেনাবাহিনী-ক্যান্টনমেন্ট উড়িয়ে দেয়, গুঁড়িয়ে দেয়, ধ্বংস করে দেয়, কুকুর, শূকর বলে, আর সেনাপ্রধান তাদের তুলু তুলু করে বলেন, ওরা ছোট মানুষ, বোঝে না...ইত্যাদি।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী এক উত্তপ্ত সংবাদ সম্মেলনে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’, ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ এবং সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রচারণা চালানোয় অভিযুক্ত করেন। তিনি দাবি করেন, ইমরান খান বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে ‘বৈজ্ঞানিক ট্রোল নেটওয়ার্ক’ পরিচালনা করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেনারেল চৌধুরী অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, ইমরান খান বারবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেন এবং তাকে ‘গাদ্দার’ বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, ইমরান খানের সোশ্যাল মিডিয়া কার্যক্রম ভারত, আফগানিস্তান ও বিদেশি ট্রোল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সমন্বিত।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক এক পোস্টে ইমরান খান তার অনুসারীদের সেনাবাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে বলেছেন, যা নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হুমকি। সেই সঙ্গে তিনি সন্ত্রাসবিরোধী ইস্যুতে কোনো ছাড় না দেওয়ার কথা জানান এবং ইমরান খানের ‘জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনার’ ইঙ্গিতকে রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করেন।
পাকসেনাবাহিনীর যে বক্তব্য-অবস্থান তাতে ইমরান খানকে হয়তো বাকি জীবন জেলেই কাটাতে হবে, অথবা তাকে রাষ্ট্রবিরোধী বা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যাও করা হতে পারে, যেমনটা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে করা হয়েছে। যে কথা ইমরান খানের বড় ছেলে কাসিম খানও বলেছেন।
লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
* মতামত লেখকের নিজস্ব
