তবে কি বিএনপি থেকে জিয়া-পরিবার মাইনাস?
প্রকাশ: ২৩:০৬, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
কবির য়াহমদ
সরকার প্রথমে খুব কায়দা করে জানিয়ে দিল, ‘তারেক রহমান বাংলাদেশের ভোটার নন’। ‘বৈধ পাসপোর্ট নেই’—এই তথ্য দেশবাসীকে জানিয়ে দিতে দ্বিতীয়বার একই তরিকা প্রতিপালন করে জানাল, তিনি দেশে ফেরত আসতে চাইলে এক দিনের মধ্যে ট্রাভেল পাস দিয়ে দেবে।
এরপর এর ফলোআপ চালিয়ে যেতে লাগল। ক্ষণে-ক্ষণে যখনই সুযোগ পাচ্ছে, তখনই জানাচ্ছে, তিনি ট্রাভেল পাসের আবেদন করেননি। আবেদন করলে মুহূর্তেই ট্রাভেল পাস দিয়ে দেবে।
ট্রাভেল পাস দিতে এত উতলা সরকার—ভাববেন না এটা আন্তরিকতার প্রকাশ; এটা আসলে প্রমাণের চেষ্টা তিনি ফিরতে চাইছেন না।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খারাপ। প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে তিন বাহিনী প্রধান সবাই গেছেন হাসপাতালে। উপদেষ্টারা লাইন ধরে দেখে এসেছেন। বেশিরভাগ দলের নেতারাও গেছেন। লন্ডন থেকে এসেছেন পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমানও। এই তালিকায় নেই একটা নাম, তারেক রহমান!
তিনি ফিরতে পারছেন না জানিয়েছেন। এদিকে সরকার জানাচ্ছে ফিরতে চাইলে তাদের আপত্তি নাই। এই যে এত ঘটনা, এর উদ্দেশ্য মূলত তারেক রহমানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে বাগড়া দেওয়া।
জুলাই-আগস্টের থানা ও কারাগার লুটের অ/স্ত্র/গুলো যদি উদ্ধার করা না যায়, তবে জামায়াত ও ধর্মীয় দলগুলোর পেশিশক্তির কাছে বিএনপি টিকতে পারবে না। সঙ্গে আছে তাদের প্রশাসনে প্রভাব। ভোটারের ভোটে ক্ষমতা নির্ধারিত হবে না; হতে পারে ও-সবে। এখানে বেশ পিছিয়ে বিএনপি। তার ওপর তারেক রহমানের নির্বাচন করা নিয়ে অনিশ্চয়তা; খালেদা জিয়ারও।
তারেক রহমানকে নির্বাচন করতে হলে, প্রথমে দেশে ফিরতে হবে; ভোটার হতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা তার পক্ষে না। খালেদা জিয়ার শারীরিক যে অবস্থা, তাতে নির্বাচনে তার অংশগ্রহণও অনিশ্চিত। আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে বিএনপির প্ররোচনায় মনোনয়নপত্র দাখিলে সশরীর উপস্থিতির যে আরপিও সংশোধনী, সেটা বিএনপির দিকেই কি তবে ব্যাকফায়ার করতে যাচ্ছে?
এক্ষেত্রে বিএনপির একটাই বিকল্প—‘বিকল্প নেতৃত্ব’। ডা. জুবাইদা রহমান এক্ষেত্রে হতে পারেন তাদের ফার্স্ট চয়েস।
খেয়াল করলে দেখবেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এটা আমলে নিচ্ছেন না। তারা আনুগত্যের নামে যা করছেন, তাতে তাদের দলই ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। তারা ভালোভাবেই জানেন তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তবু তারা কিছু বলছেন না। তবে কি তাদের ছাড়াই নির্বাচনে যেতে চাচ্ছেন তারা? অবস্থাদৃষ্টে সেটাই মনে হচ্ছে। এটা যদি হয়, তবে জেনে রাখুন—এটা সরকারি প্রেসক্রিপশন। ফখরুল ইসলাম, সালাহউদ্দিন আহমদ ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা জেগেছে কি তবে? এই-তিনের মধ্যে আমি আবার এগিয়ে রাখি শেষোক্তজনকে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিবিধ সমস্যা সত্ত্বেও বিএনপি ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন নিয়ে ‘The Show Must Go On’ নীতিতে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন তবে জুলাই সনদে বর্ণিত দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী পদে ভিন্ন ব্যক্তির যে সুপারিশ, সেটা বাস্তবায়িত হয়ে যায়। নির্বাচনে জিতলে বিএনপি এটা মানত না নিঃসন্দেহে, কিন্তু যে পথে এগোচ্ছে সব, তাতে এটা এমনিতেই প্রতিপালিত হয়ে যায়।
তবে কি বিএনপি থেকে জিয়া-পরিবার মাইনাস? মাইনাস না হওয়ার সম্ভাবনাও থাকছে ডা. জুবাইদা রহমানকে দিয়ে। যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতারা তাকে রাজনীতিতে আনার কথা বলছেন না, তবে ফখরুল-সালাউদ্দিন-আমীরকে ঠেকাতে বিএনপির কেন্দ্রের কেউ না কেউ কোনো একটা সময়ে এ আওয়াজ তুললেও তুলতে পারেন।
যদি তা না হয়, তবে আরও একবার উচ্চারিত হতে পারে, সেই সে বাক্য—গেইম ইজ ওভার! আগের উচ্চারণে বিএনপির জন্যে সম্ভাবনার দরজা খুলেছিল, এবারের উচ্চারণে খোলা দরজা বন্ধ হবে!
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
* মতামত লেখকের নিজস্ব
