নির্বাচনী রাজনীতিতে সব জোটকে স্পেস দেওয়াটা কঠিন!
প্রকাশ: ২৩:৪৭, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২৩:৫৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
আরিফ জেবতিক
বিএনপির দ্বিতীয় পর্যায়ের নমিনেশন ঘোষণার পরে ‘গণতন্ত্র মঞ্চের’ একটা সভার ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বাকি সব নেতারা হতাশ। যতদূর বুঝতে পারছি, মান্না ভাই আর জোনায়েদ সাকি ছাড়া এই মঞ্চের আর কাউকে আসন ছাড় দিবে না বিএনপি। বিএনপির দোষ দিতে পারি না, কারণ তারা যেখানেই আসন ছাড় দিতে চায়, সেখানেই স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতার ওপর জুলুম হয়ে যায়।
যেমন উত্তরাতে তারা সিগ্ধকে (মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ) শেষ পর্যন্ত নমিনেশন দেয়নি। এখানে জাহাঙ্গীর (এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন) নামের যাকে প্রার্থী করেছে, উনি নাকি কয়েকশ মামলার আসামি ছিলেন। বিগত বছরের পর বছর এখানে উনি সংগঠন ধরে রেখেছেন। উনাকে না দিয়ে স্নিগ্ধকে নমিনেশন দিলে সেটি অন্যায় হয়। ‘মায়ের ডাকের’ তুলিকে (সানজিদা ইসলাম তুলি) যেখানে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে, সেখানে বিএনপির সাজু (এস এ সিদ্দিক সাজু) নামের যিনি আছেন তিনি সংগঠন ধরে রেখেছেন এতদিন। তুলি নিশ্চয়ই যোগ্য একজন প্রার্থী এবং তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও বিগত সরকারের সময় তার ইমপ্যাক্ট এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিতে তার থেকে সাজুর হক বেশি।
তা এগুলো তবু অভ্যন্তরীণ ঘটনা। কিন্তু গণতন্ত্র মঞ্চের বা এই ধরনের ছোট দল ও জোটের জন্য স্পেস বের করাটা খুবই ঝামেলার। স্থানীয়ভাবে এদের কেউ পাত্তা দেয় না।
মান্না ভাই আমাদের সমসাময়িক রাজনীতির ট্র্যাজিক হিরো। একসময়ের কী দুর্দান্ত ছাত্রনেতা ছিলেন তিনি। একই সাথে চাকসু এবং ডাকসুতে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন, এরকম দ্বিতীয় কোনো ছাত্রনেতা ইতিহাসে আছেন বলে আমার জানা নেই। সেই মান্না ভাই জাসদ, বাসদ ইত্যাদি শেষ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকও হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে উনার ভালো লাগেনি। বুদ্ধিমান হলে সেই সময় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকেই ডিগবাজি দিয়ে বিএনপিতে যোগ দিলে ভালো করতেন। একে তো বগুড়ার ছাওয়াল, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে সরাসরি বিএনপিতে যোগ দিলে একটা ভালো ইমপ্যাক্ট তৈরি হতো, তিনি বগুড়ার সিটটা অন্তত সিকিউর করতে পারতেন। বগুড়ায় না পেলেও ঢাকায় তিনি কোনো একটা আসনে ক্যান্ডিডেট হিসেবে নিশ্চিত নমিনেশন পেতে পারতেন।
কিন্তু এখন নির্বাচনী রাজনীতিতে এই সব জোটকে স্পেস দেওয়াটা কঠিন। এজন্যই উচ্চকক্ষটা কাজে আসবে। যেসব প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া বিভিন্ন কারণে সম্ভব না, বড় দলগুলোর উচিত সেই ছোট দল ও প্রার্থীদের উচ্চকক্ষের সিট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া। প্রয়োজনে এই নমিনেশনগুলো আগেভাগে ঘোষণা করে দেওয়া।
কারণ রাজনীতিকে নিরাপদ রাখতে হলে কথা বলতে পারে, বিরোধিতা করতে পারে এরকম অনেক লোককে স্পেস দেওয়া দরকার। এদের হাউকাউ থাকলে যেকোনো সরকার মোটামুটি জনমুখী থাকে। এটি না করে সবখানে চামচাদের উৎসাহিত করলে বিপজ্জনক দিক।
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট
* মতামত লেখকের নিজস্ব
