বিবিসি নিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারির ব্যঙ্গ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:৩৭, ১০ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:৩৩, ১১ নভেম্বর ২০২৫
হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী গণমাধ্যম বিবিসি এখন গভীর সংকটে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে তৈরি এক প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠতেই পদত্যাগ করেছেন বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও সংবাদ বিভাগের প্রধান ডেবোরা টারনেস। এই ঘটনাকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট, যা যুক্তরাজ্য–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কেও নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে।
২০২১ সালের ক্যাপিটল হিল হামলা নিয়ে বিবিসির প্রামাণ্যচিত্রে অভিযোগ ওঠে—প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়, যেন মনে হয় ট্রাম্প সরাসরি দাঙ্গায় উৎসাহ দিয়েছেন।
এই ‘এডিটিং ত্রুটি’ প্রকাশ্যে আসতেই ওয়াশিংটনসহ বিশ্বমাধ্যমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বিবিসির সম্পাদকীয় স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
রবিবার হঠাৎ করেই দুই শীর্ষ কর্মকর্তা একযোগে পদত্যাগপত্র জমা দেন। টিম ডেভি বলেন, ‘কিছু ভুল হয়েছে, যা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।’
অন্যদিকে ডেবোরা টারনেস স্বীকার করেন—‘প্যানোরামা অনুষ্ঠানের এই বিতর্ক এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে; যা বিবিসির সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে।’
ব্রিটেনের সংস্কৃতি, গণমাধ্যম ও ক্রীড়া মন্ত্রী লিসা ন্যান্ডি টিম ডেভিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘জনগণের জন্য তার সম্প্রচারমূলক অবদান অনন্য। এখন বিবিসিকে নতুন যুগে নিজেদের মানিয়ে নিতে হবে।’
বিবিসির এই পদত্যাগের খবর প্রকাশ পেতেই হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুটি সংবাদ প্রতিবেদন শেয়ার করে ক্যাপশন দেন—‘শট/চেসার’.
প্রথমটি ছিল দ্য টেলিগ্রাফ’র প্রতিবেদন ‘ট্রাম্প গোস টু ওয়ার উইথ বিবিসি’, আর দ্বিতীয়টি বিবিসির নিজের প্রতিবেদন—‘বিবিসি ডিরেক্টর জেনারেল টিভ ডেভি রিজাইনস’।
এই জনপ্রিয় মিম ফরম্যাট ব্যবহার করে লেভিট সরাসরি বিবিসিকে ব্যঙ্গ করেন। এর আগে তিনি বিবিসিকে ‘বামপন্থি প্রচারণা যন্ত্র’ ও ‘শতভাগ ভুয়া সংবাদমাধ্যম’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।
বিবিসির এই ঘটনা যুক্তরাজ্যের মিডিয়া জগতে বিশাল আলোড়ন তুলেছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত বার্ষিক লাইসেন্স ফি ও সরকারি বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্থায়িত হয়ে থাকে—যা গণমাধ্যমটিকে একই সঙ্গে স্বাধীন ও জবাবদিহিমূলক উভয় অবস্থায় সচেষ্ট রাখে।
অভিযোগ উঠেছে—এই আর্থিক নির্ভরশীলতা হয়তো তাদের সম্পাদকীয় সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদত্যাগ ব্রিটিশ সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক বড় মোড়, যা বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করবে।
