ট্রাম্পের ভাষণ বিকৃতি : বিবিসি মহাপরিচালক ও নিউজ প্রধানের পদত্যাগ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬:৫৯, ১০ নভেম্বর ২০২৫
যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম বিবিসি বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষণ বিকৃতভাবে প্রচারের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক টিম ডেভি ও হেড অব নিউজ ডেবোরা টারনেস পদত্যাগ করেছেন।
বিবিসির ইতিহাসে একই দিনে দু’জন শীর্ষ কর্মকর্তা একসঙ্গে পদত্যাগের এমন ঘটনা নজিরবিহীন।
প্যানোরামা প্রোগ্রামের বিতর্ক
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, বিবিসির জনপ্রিয় অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান প্যানোরামা-এর একটি পর্বে ট্রাম্পের ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ভাষণ থেকে দুটি অংশ কেটে একত্রে প্রচার করা হয়। এতে মনে হয়, ট্রাম্প সরাসরি ক্যাপিটল হিলে হামলার আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু আসলে দুই অংশের মধ্যে ছিল ৫০ মিনিটের বিরতি, যা সম্পাদনার মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়। ফলে, এটি “ইচ্ছাকৃত বিকৃতি” বলে সমালোচিত হয়।
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই ব্রিটিশ রাজনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়। অনেকেই বিবিসিতে “পক্ষপাতিত্ব সংস্কৃতি” আছে বলে অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে, ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, “বিবিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করছেন কারণ তারা আমার নিখুঁত ভাষণ বিকৃত করেছেন। এরা গণতন্ত্রের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর অসৎ মানুষ।”
দ্য টেলিগ্রাফে ফাঁস হওয়া একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে,
বিবিসি আরবিক বিভাগের ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ কাভারেজে পক্ষপাতের “ব্যবস্থাগত সমস্যা” রয়েছে। এছাড়া, ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে একপেশে সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগও ওঠে।
এই প্রতিবেদনের লেখক মাইকেল প্রেসকট — বিবিসির সম্পাদকীয় মানদণ্ড কমিটির সাবেক উপদেষ্টা — জানান, ম্যানেজমেন্টের “নিষ্ক্রিয়তা” তাকে হতাশ করেছে।
রবিবার সন্ধ্যায় টিম ডেভি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “বিবিসি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান— আমাদের সর্বদা স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও দায়বদ্ধ থাকতে হবে। সাম্প্রতিক বিতর্কও আমার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।”
একইসঙ্গে হেড অব নিউজ ডেবোরা টারনেস বলেন,
“প্যানোরামা ঘিরে বিতর্ক এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা বিবিসির ক্ষতি করছে। জনজীবনের নেতাদের জবাবদিহি থাকা জরুরি— তাই আমি পদত্যাগ করছি।”
টিম ডেভি ২০২০ সাল থেকে বিবিসির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার নেতৃত্বে বিবিসি ডিজিটাল রূপান্তরে এগিয়ে গেলেও, পক্ষপাতের অভিযোগে তিনি বারবার সমালোচিত হন।
বর্তমানে এই ঘটনাকে ঘিরে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম জগতে বড় ধরনের নৈতিক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে — সংবাদসম্প্রচারে ন্যায্যতা, সম্পাদনা নীতি ও সাংবাদিকতার দায়বদ্ধতা নিয়ে নতুন বিতর্কের সূচনা করেছে এই পদত্যাগ।
