বিতর্কের মু্খে ফের সংবাদ সম্মেলন, ডাক পেলেন নারীরা
নারী সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:৪১, ১২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:৫৬, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারতে এসে প্রথমেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। দিল্লিতে আয়োজিত তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে কোনো নারী সাংবাদিককে প্রবেশাধিকার না দেওয়ায় তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ‘লিঙ্গবৈষম্যের’ অভিযোগ।
কিন্তু রবিবার যেন ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এর চেষ্টায় নামলেন মুত্তাকি। দ্বিতীয় দফায় নতুন এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে নারী সাংবাদিকদের সামনে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন—এ সবই ‘টেকনিক্যাল ত্রুটি’, ইচ্ছাকৃত কিছু নয়।
রবিবার সংবাদ সম্মেলনে মুত্তাকি বলেন, “সংবাদ সম্মেলনটি স্বল্প সময়ের নোটিসে আয়োজিত হয়েছিল। সাংবাদিকদের একটি সীমিত তালিকা করা হয়েছিল। সেই তালিকায় কারা থাকবেন, তা মুম্বাইয়ে আফগান কনসাল জেনারেলের সহকর্মীরা নির্ধারণ করেছিলেন। এটার অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।” তার দাবি, “এই ঘটনার মাধ্যমে কোনোভাবেই নারী সাংবাদিকদের হেয় করা হয়নি, বরং এটি ভুল বোঝাবুঝি।”
ঘটনার শুরু শুক্রবার। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লিতে সংবাদ সম্মেলন করেন আফগান মন্ত্রী মুত্তাকি। কিন্তু সেখানে দেখা যায়—একজনও নারী সাংবাদিক নেই। উপস্থিত নারী সাংবাদিকদের ঢুকতেও বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে।
অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “আমরা পোশাকবিধি মেনে উপস্থিত হয়েছিলাম, তবু আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।” ফলে ভারতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলেও শুরু হয় সমালোচনা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেয়—এই ঘটনার সঙ্গে নয়াদিল্লির কোনো সম্পর্ক নেই। আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছিল মুম্বাইয়ে আফগান কনসাল জেনারেলের দপ্তর থেকে, এবং সাংবাদিক নির্বাচন সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে হয়েছে।
সমালোচনার পর রবিবার ফের সংবাদ সম্মেলন ডেকে এবার সরাসরি নারী সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানান মুত্তাকি। মুখে তুলে নেন ‘বুঝতে ভুল হয়েছে’-এর ঢাল। তবে তার এই পদক্ষেপে বিতর্ক কিছুটা প্রশমিত হলেও সম্পূর্ণ প্রশমিত হয়নি বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক দৈনিক দ্য ইনডিপেনডেন্ট-এর বরাতে জানা যায়, এক নারী সাংবাদিক আফগান মেয়েদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে মুত্তাকি বলেন, “নারীদের শিক্ষা ইসলামি শরিয়তে হারাম নয়। তবে দেশের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত মেয়েদের উচ্চশিক্ষা স্থগিত থাকবে।”
তিনি দাবি করেন, বর্তমানে আফগানিস্তানে এক কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে, যার মধ্যে ২৮ লাখ নারী ও কন্যা শিক্ষার্থী। তার ভাষায়, “কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধতা আছে, তবে আমরা শিক্ষার বিরোধী নই।”
তবে বক্তব্যের পর সাংবাদিকদের আর প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষ সম্পর্কেও মন্তব্য করেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন,“কাতার ও সৌদি আরব উভয় পক্ষকে শত্রুতা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে, আমরাও তা মেনে নিয়েছি। আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে।আফগানিস্তানে আমরা শান্তি এনেছি, এখন আঞ্চলিক শান্তির জন্য কাজ করছি। কিন্তু কেউ যদি শান্তি না চায়, আমরা আমাদের সীমান্ত রক্ষা করব।”
ভারতীয় সাংবাদিকদের প্রশ্নে—পাকিস্তানের হামলার পেছনে কি ভারতের সঙ্গে আফগান সম্পর্কের উষ্ণতাই কারণ?—মুত্তাকির সংক্ষিপ্ত উত্তর, “এর জবাব পাকিস্তানের কাছেই জানতে হবে।”