বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

নারীনেত্রীদের সঙ্গে সংলাপে সিইসি

নারী ভোটার বেড়েছে, এবার লিঙ্গ সংবেদনশীল নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১:৪৪, ৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০১:১০, ৮ অক্টোবর ২০২৫

নারী ভোটার বেড়েছে, এবার লিঙ্গ সংবেদনশীল নির্বাচন

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি’ বা ‘লিঙ্গ সংবেদনশীল’ হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।

তিনি বলেন, “স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পাশাপাশি আমরা এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করতে চাই যেখানে নারী ভোটার ও প্রার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। এটি হবে ‘ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল অ্যান্ড জেন্ডার ফ্রেন্ডলি ইলেকশন’।”

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নারীনেত্রীদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপে সিইসি এসব কথা বলেন। সংলাপে চার নির্বাচন কমিশনার, নারী নেত্রী ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এসময় সিইসি বলেন, “বিগত সময়ে মানুষ নির্বাচনপদ্ধতির ওপর আস্থা হারিয়েছিল, বিশেষ করে নারী ভোটারদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নারী ভোটার সংখ্যা বেড়েছে। আগে নারী ভোটার পুরুষের চেয়ে ৩০ লাখ কম ছিল, এখন তা নেমে এসেছে ১৮ লাখে।”

তিনি আরও বলেন, “এটা প্রমাণ করে মানুষ এখন ভোটার হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী ও সচেতন। আমরা নারী অংশগ্রহণকে আরও উৎসাহিত করতে চাই।”

সংলাপে নারী প্রতিনিধিরা জাতীয় সংসদে নারী প্রার্থীদের সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ, ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বাধ্য করা, নারী ভোটার ও প্রার্থীর নিরাপত্তা জোরদার, নির্বাচনে কালোটাকার ব্যবহার রোধ, আচরণবিধি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, দুর্গম এলাকায় পোস্টাল ভোট চালুর মতো প্রস্তাব দেন।

এ বিষয়ে ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশী কবির বলেন, “নারীদের জন্য আমরা সরাসরি নির্বাচন এবং সংরক্ষিত আসন চাই। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলে নারীরা সংসদে প্রকৃত ভূমিকা রাখতে পারবেন।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ”নারীবিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের প্রার্থী করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। প্রার্থিতা ও প্রতীক বরাদ্দে এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।”

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক সংসদের আসনসংখ্যা ৬০০ করার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, “প্রতিটি এলাকায় একটি সাধারণ আসন থাকবে, সেখানে নারী বা পুরুষ উভয়ই প্রার্থী হতে পারবেন। পাশাপাশি একটি সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে।”

সংলাপে নির্বাচনের সময় নারী সহিংসতা প্রতিরোধে জোর দাবি জানান নারী প্রতিনিধিরা। 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, “নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে নারীদের ওপর সহিংসতার হার বেড়ে যায়। এবার যেন সে পুনরাবৃত্তি না হয়, নির্বাচন কমিশনকে সে দায়িত্ব নিতে হবে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “নারীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী প্রচারণা ও অপপ্রচার প্রায়ই দেখা যায়, যা তাদের জন্য বড় হুমকি হয়ে ওঠে।”

সংলাপে দুর্গম এলাকার নারী ভোটারদের অন্তর্ভুক্তির কথাও বলেন নারী প্রতিনিধিরা। 

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক মাহা মির্জা বলেন,  “শিল্পাঞ্চলে বসবাসরত নারী শ্রমিকদের অনেকে অস্থায়ী ঠিকানার কারণে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না। তাঁদের তালিকায় যুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে।”

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ইলিরা দেওয়ান বলেন, “পার্বত্য এলাকার অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট নেই। পোস্টাল ভোট বা বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে সেখানে ভোট নিশ্চিত করা জরুরি।”

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নাগরিকদের ভোটের বিষয়ে বি-স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব বলেন, “ইসি যেন জেন্ডার ও প্রতিবন্ধী সংবেদনশীল নির্বাচন আয়োজন করে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস, ইউপিএলের পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন, উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, আইনজীবী সীমা জহুর, অধিকারকর্মী মিষ্টি আশরাফুন নাহার প্রমুখ।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন