ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পরামর্শ
আচরণবিধি কড়া করার আহ্বান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:০৬, ৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২০:১৮, ৭ অক্টোবর ২০২৫

সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে মাঠে আচরণবিধি সুশৃঙ্খলভাবে কার্যকর করার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান জরুরি বলে মত দিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া তাৎক্ষণিক দণ্ড ও নজরদারি ব্যবস্থা মজবুত করারও তাগিদ দেন তারা।
আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচনী সংলাপে অংশ নিয়ে এসব পরামর্শ দেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, শুধু আইন ও নির্দেশনা জারি করলে চলবে না, স্বচ্ছতা দিয়ে ইসির কার্যক্রম চালাতে হবে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
নির্বাচনে আচরণ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই শক্ত অবস্থানে থাকার কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র পাহারা কমিটি গঠন, ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া, দলীয় সংশ্লিষ্টতা আছে এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়া, নির্বাচনী এলাকায় একাধিক রিটার্নিং অফিসার রাখা, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে করা, বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারীদের এবার নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা এবং কালো টাকা, অর্থ পাচারকারী ও ঋণ খেলাপিদের নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন তারা।
সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার কমিশনার ও ৯ জন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং একজন পর্যবেক্ষক অংশ নেন।
ইসির সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া বলেন, সীমান্ত দিয়ে আসা নকল টাকা, সন্ত্রাসী ও মাদক প্রবেশ প্রতিরোধসহ অস্ত্র উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তিনি আরও বলেন, অনিয়মের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রায়ই সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারেন না—ফলে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নির্বাহী ক্ষমতা দিলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে।
ইসির সাবেক উপসচিব মাহফুজা আক্তার বলেন, আচরণবিধি প্রয়োগ নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার আগ থেকেই মনিটরিংয়ে থাকা উচিত। মাঠপর্যায়ে আচরণবিধি কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য কমিশন কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সুসংগঠিত কমিটি গঠন করে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ও মনিটরিং কৌশল নির্ধারণ করুক—যাতে প্রশাসন ও ইসির কর্মকর্তারা এক ছকে কাজ করতে পারেন।
নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক খন্দকার মিজানুর রহমান সংলাপে বলেন, বর্তমান কমিশনকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে থাকতে হচ্ছে; তাই প্রথম থেকেই শক্ত অবস্থান নিতে হবে এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সাতটি জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে ইসির সাবেক উপসচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, নির্বাচনী অঞ্চলে ‘অঙ্গীভূত’ আনসার দলের অনুকরণ এড়াতে তাদের নিয়োগ সীমিত রাখা উচিত; ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের উপজেলা-সীমার বাইরে থেকে নিয়ে আসা ও অনিয়মের ওপর তাৎক্ষণিক বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, যদি ইসির কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া যায়, তাহলে অচিরেই তৎক্ষণাৎ আদেশ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মুনিরা খানম বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের আলোচনা হচ্ছে। গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একই দিনে করতে পারেন। আলাদা করলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে।
সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, অভিযোগ মোকাবিলার জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হবে এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিতার প্রমাণ পেলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে বহু চাকরিপ্রাপ্তদের মধ্যে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ লোক বাছাই করা কঠিন; তাই নজরদারি ও তদন্ত ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।