রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার ৭ প্রস্তাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩:৪১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০০:০৬, ১ অক্টোবর ২০২৫

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এই সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ভেতরেই নিহিত। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। সংকটের একমাত্র সমাধান হলো রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন।
আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কার্যকর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, আট বছর অতিক্রান্ত হলেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং অর্থায়নের ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সংকটের সমাধান মিয়ানমারের ভেতরেই নিহিত। তাই মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগ ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। সংকটের একমাত্র সমাধান হলো রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন।
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে দেশকে বিশাল আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষতি বহন করতে হচ্ছে। সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবাহসহ নানা অপরাধ জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সাত দফা প্রস্তাব
প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যে সাত দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন, সেগুলো হলো—
১. নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ তৈরি এবং রাখাইনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
২. মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ প্রয়োগ করে সহিংসতা বন্ধ এবং দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করা।
৩. রাখাইনে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোগাড় এবং আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতির মাধ্যমে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ।
৪. রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় টেকসই একীভূতকরণের জন্য আস্থা তৈরির পদক্ষেপ।
৫. যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা (Joint Response Plan) পূর্ণ অর্থায়নে দাতাদের সমর্থন।
৬. জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
৭. মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ।
ড. ইউনূস বলেন, “বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের অপেক্ষায় রাখতে পারে না। আজ আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে—একযোগে কাজ করে এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”