বালুময় মরুর বুকে সৌদি ফ্যাশনের নবজাগরণ
রাজীব শাঁখারী
প্রকাশ: ১৯:৩৩, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২১:১৩, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
সৌদি ফ্যাশনের নবজাগরণ। ছবি: সংগৃহীত
বালুময় মরুভূমি, পবিত্র নগরী মক্কা-মদিনা আর আরব ঐতিহ্যের গৌরবময় বিষয়গুলোর কথা মনে পড়তেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সৌদির কথা। অথচ গেল কয়েক বছরগুলোয় দেশটির ফ্যাশনে এসেছে এক বৈচিত্র্যময় চমকপ্রদ রূপান্তর। তেলের অর্থনীতিনির্ভর সৌদি আজ পরিণত হয়েছে লাক্সারি ফ্যাশনের এক নতুন কেন্দ্রে। যেখানে, ঐতিহ্য আর আধুনিকতার নজরকাড়া মেলবন্ধন তৈরি করছে অনন্য এক সাংস্কৃতিক নবজাগরণ।
বৈশ্বিক মঞ্চে সৌদি ফ্যাশন ব্র্যান্ড
এখন শুধু আরব উপসাগরীয় অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নেই সৌদি ডিজাইনাররা। প্যারিস, মিলান, লন্ডনসহ বিশ্বের বিখ্যাত র্যাম্পগুলোতে সৌদি ব্র্যান্ডগুলোর উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে। ‘মেড ইন সৌদি’ এখন কেবল একটি লেবেল নয়, এটি এখন মর্যাদা, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার প্রতীক। আশি স্টুডিও’র প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আশি ২০২৩ সালে উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম ডিজাইনার হিসেবে ‘প্যারিস ওত কতুর ফ্যাশন উইক’এ অংশ নিয়ে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস।
এছাড়া রিম আর কানহাল, নোরা আলদামার, খালিদ আল মাসউড এবং তালা আবু খালেদের মতো ডিজাইনাররা সৌদি ফ্যাশনের প্রতিনিধিত্ব করছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে। উদ্দেশ্য একটাই ভিশন টোয়েন্টিথার্টির লক্ষ্য পুরণ। সৌদি ফ্যাশন কমিশন’র অধীনে ‘সৌদি হানড্রেড ব্র্যান্ডস’ এর উদ্যোগে সৌদির ৪০টির বেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ড হোয়াইট মিলানো, প্যারিস ফ্যাশন উইক ও লন্ডন সেলফরিজেজের মতো বিশ্বখ্যাত সব শোর মঞ্চে অংশগ্রহণ করছে। তারা প্রমাণ করেছে, সৌদি এখন বৈশ্বিক ফ্যাশন মানচিত্রের এক অন্যতম শক্তিশালী প্রতিনিধি।

রিয়াদ ও জেদ্দার ঝলমলে ফ্যাশন
সৌদি ফ্যাশনের প্রাণকেন্দ্র রিয়াদ এবং জেদ্দা। এখানকার সিল্ক গাউন, হীরার কাজ করা আবায়া, সোনালি জুয়েলারি ও কাফতান, সবকিছুর মধ্যেই ঘটছে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার নিখুঁত মেলবন্ধন।
এখন সৌদি ফ্যাশনপ্রেমীদের নতুন গন্তব্য রিয়াদের তহলিয়া স্ট্রিট এবং কিং আবদুল্লাহ ফিনানসিয়াল ডিস্ট্রিক্ট। আর জেদ্দার আল-বালাদ এবং সালাম মল। রিয়াদ এবং জেদ্দার সিজনগুলো সাংস্কৃতিক উৎসবগুলো ফ্যাশন জোয়ারে যুক্ত করছে সংগীত, শিল্পকলা ও বিনোদনের রঙিন পটচিত্র। এখন শুরু হয়েছে রিয়াদ সিজন, চলবে মার্চ পর্যন্ত।

বিলাসী মডেস্ট ওয়্যারে নতুন ধারা
সৌদি ফ্যাশনে লাক্সারি মডেস্ট ওয়্যার এখন সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ। ঐতিহ্যবাহী আবায়া, কাফতান কিংবা ফ্লোয়িং গাউনকে নতুন ডিজাইন, আধুনিক কাট ও সূক্ষ্ম অলঙ্করণকে আন্তর্জাতিকভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
ধর্মীয় মূল্যবোধকে আঘাত না করেই কীভাবে আধুনিক ফ্যাশন ধারণাকে ফুটিয়ে তোলা যায়, তারই উদাহরণ সৃষ্টি করছেন সৌদি ডিজাইনাররা। ফলে বাংলাদেশের অভিজাত নারীরা, যারা আভিজাত্য বজায় রেখে মার্জিত পোশাক পছন্দ করেন, তাদের কাছে সৌদি ফ্যাশন হয়ে উঠছে ফ্যাশনের নতুন অনুপ্রেরণা। রিয়াদের কিংডম সেন্টার মল, জেদ্দার রেড সি মল এবং দিরিয়াহের বিলাসবহুল বুটিকগুলোতে এই ধরনের পোশাকের জনপ্রিয়তা দিনদিন বেড়েই চলেছে।
শপিংয়ের সঙ্গে সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা
সৌদি আরবে ফ্যাশন এখন কেবল পোশাক নয়, এটি এখন সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতারও একটি অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। আলউলা সামার নাইটে মরুভূমির বুকে তারার চাঁদোয়ায় অনুষ্ঠিত কতুর শো কিংবা রিয়াদের জ্যাক্স ডিস্ট্রিক্টের ফ্যাশন, আর্ট ও ডিজাইনের মিলনমেলা তৈরি করছে এক অনন্য আবহ।

বাংলাদেশিদের রুচিতে আসছে পরিবর্তন
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশিরা পাশ্চাত্য ব্র্যান্ডের প্রভাবে ছিল প্রবল প্রভাবিত।তবে এখন সেই রুচিতে আসছে পরিবর্তন। সৌদি ফ্যাশনের নবজোয়ার তাদের জন্য খুলে দিয়েছে এক নতুন দুয়ার, যেখানে বিলাসিতার সঙ্গে সমান্তরালে চলছে সংস্কৃতিও। বাংলাদেশিরা এখন সৌদির বিভিন্ন ফ্যাশন উইক, রিয়াদ বুলেভার্ড সিটি বা দিরিয়াহের বুটিক স্ট্রিটের শপিং-এ অংশগ্রহণ করছে।
সৌদি ফ্যাশনের ভবিষ্যৎ
ভিশন টোয়েন্টিথার্টি কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফ্যাশন এখন সৌদি সরকারের একটি কৌশলগত শিল্প খাত। ‘সৌদি ফ্যাশন কমিশন’ ডিজাইনারদের জন্য আন্তর্জাতিক মেন্টরশিপের ব্যবস্থা করা ছাড়াও ব্র্যান্ডিং সাপোর্ট দিচ্ছে। এমনকি বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের সুযোগও করে দিচ্ছে। এই প্রচেষ্টার ফলে় সৌদি প্রমাণ করছে ফ্যাশনের মাধ্যমে দেশটি তার নতুন, উদার ও আধুনিক ভাবমূর্তি তুলে ধরছে বিশ্ববাসীর সামনে।

শেষ কথা
সৌদি আরবের ফ্যাশনের এই নবজাগরণ আসলে একধরনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব।যা ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরেও কীভাবে আধুনিক ওত কতুরকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা যায়, তার অনন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সৌদি। মরুর বুকে জন্ম নেওয়া এই ফ্যাশনের নবজাগরণ কেবল সৌদির নয়, বরং বৈশ্বিক ফ্যাশন আন্দোলনেরই এক নবীন অধ্যায়।
তথ্যসূত্র: সৌদি টুরিজম অথরিটি
