বেক্সিমকো টেক্সটাইল খুলছে
রিভাইভালের লিজে কাজে ফিরবেন ২৫ হাজার শ্রমিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:১২, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
বেক্সিমকো টেক্সটাইল। ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ বস্ত্র উৎপাদন কারখানা বেক্সিমকো টেক্সটাইল ডিভিশন পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে জাপান–বাংলাদেশি ইথিক্যাল ফ্যাশন ব্র্যান্ড রিভাইভাল গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ও রিভাইভাল প্রজেক্টস লিমিটেড। কারখানাটির পূর্ণাঙ্গ লিজ নেওয়ার মাধ্যমে ডিসেম্বর থেকেই নতুন উৎপাদন চক্র শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এতে অন্তত ২৫ হাজার শ্রমিক পুনরায় কাজে ফিরবেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের শিল্পখাতে অন্যতম বৃহৎ কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
একসময় দেশের টেক্সটাইল খাতের শীর্ষ উৎপাদন কেন্দ্র ছিল বেক্সিমকো টেক্সটাইল। প্রায় তিন দশক সফলভাবে পরিচালিত হওয়ার পর আকস্মিক ঋণসংকট ও ব্যবস্থাপনা জটিলতায় কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এতে হাজারো শ্রমিক চাকরি হারান এবং আশপাশের এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও ভেঙে পড়ে।
রিভাইভালের এই উদ্যোগকে শিল্পপাড়া, ব্যাংকিং খাত ও ক্রেতা এলাকার মধ্যে নতুন করে প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে—পুরোনো ব্যবস্থাপনা দলকে ফিরিয়ে আনা হবে,পূর্বের শ্রমিকদের পুনর্বহাল দেওয়া হবে, জাপানি সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ ব্যবস্থাপক আনা হবে, স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বৈশ্বিক ‘বিগ ফোর’ অডিট ফার্ম নিয়োগ করা হবে।
প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইকোমিলি, যার প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি প্রবাসীরা।
প্রথম ধাপে ২০ মিলিয়ন ডলার ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি সুবিধা। প্রয়োজন হলে তা ১০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হবে।
ইকোমিলির প্রেসিডেন্ট ড. ফারহান এস. করিম বলেন, “এটি ব্রেইন ড্রেইনের গল্প নয়, ব্রেইন গেইনের গল্প।”
রিভাইভাল শুধু উৎপাদন নয়, বাংলাদেশের টেক্সটাইল–ফ্যাশন শিল্পে মৌলিক রূপান্তর আনতে চায়। এজন্য—বেক্সিমকোর আগের আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগ, নতুন ব্র্যান্ড ও বৈশ্বিক অংশীদার যুক্ত করার পরিকল্পনা।
রিভাইভাল প্রজেক্টস, জনতা ব্যাংক এবং বেক্সিমকোর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় লিজ চুক্তির খসড়া গত ৮ অক্টোবর জমা দেওয়া হয়েছে।
আগামী ১৮ নভেম্বর জনতা ব্যাংকের বোর্ড সভায় খসড়াটি অনুমোদিত হলে চলতি মাসেই চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে রিভাইভাল ও ইকোমিলির শীর্ষ কর্মকর্তা ঢাকায় এসে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।
রিভাইভালের সিইও ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা হুদা মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন—“এটা শুধু একটি কারখানার পুনরায় চালু নয়—হাজারো পরিবারের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ।”
বেক্সিমকো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী জানান—বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ৪২ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান রক্ষা করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। রিভাইভালের উদ্যোগে কারখানাটি আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে উৎপাদন শুরু, ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক সরাসরি কাজে ফিরবেন, ২০২৭ সালের মধ্যে বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য।
জাপানি শৃঙ্খলা, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সহায়তা এবং বাংলাদেশের শ্রমশক্তির দক্ষতার সমন্বয়ে বেক্সিমকো টেক্সটাইলের এই পুনর্জাগরণ দেশের শিল্পখাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
