শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

সেবাস্তিয়ঁ লেকর্নুর পদত্যাগে নতুন রাজনৈতিক সংকট

মাত্র ২৬ দিন দায়িত্বে ছিলেন; সংসদে সমর্থন সঙ্কটে সরকার পতন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক 

প্রকাশ: ১৪:৩৭, ৬ অক্টোবর ২০২৫

সেবাস্তিয়ঁ লেকর্নুর পদত্যাগে নতুন রাজনৈতিক সংকট

ছবি : বিবিসি

ফ্রান্সে আবারও রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ঁ লেকর্নু দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ২৬ দিন পরই পদত্যাগ করেছেন। সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে এলিসি প্রাসাদে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেন। প্রেসিডেন্ট তার পদত্যাগ গ্রহণ করেছেন বলে ফরাসি গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও বিবিসি নিউজ নিশ্চিত করেছে।

লেকর্নুর নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণার একদিন পরই এ পদত্যাগ আসে। জাতীয় পরিষদের (ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তার মন্ত্রিসভার গঠন নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু করে। তারা অভিযোগ তোলে, নতুন সরকার আসলে আগের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রুর প্রশাসনেরই প্রায় পুনরাবৃত্তি, যা দেশের বর্তমান অচলাবস্থাকে কাটাতে পারবে না।

বামপন্থি ও ডানপন্থি দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনার হুমকি দেয়। এর মধ্যেই লেকর্নু পদত্যাগ করেন, ফলে সরকার কার্যত ভেঙে পড়ে।

সেবাস্তিয়ঁ লেকর্নু ম্যাক্রোঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। জুলাই ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ফ্রান্সে কোনো দলই স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ফলস্বরূপ গত দুই বছরে দেশটিতে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেছেন — যা ফ্রান্সের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন।
এই রাজনৈতিক অচলাবস্থা সরকারের বাজেট অনুমোদন থেকে শুরু করে সংস্কারমূলক বিল পাস পর্যন্ত সবকিছুই অনিশ্চিত করে তুলেছে।


লেকর্নুর পদত্যাগের পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়েছে। বিরোধী দলগুলো আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচন দাবিতে একজোট হচ্ছে। বামপন্থি জোট ‘নিউ পপুলার ফ্রন্ট’ এবং রক্ষণশীল রিপাবলিকান পার্টি উভয়ই বলেছে, “জনগণের ম্যান্ডেট পুনর্নবীকরণ ছাড়া ফ্রান্সে স্থিতিশীল সরকার সম্ভব নয়।”
তবে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, তিনি ২০২৭ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন এবং পদত্যাগের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।

 

ইউরোপের বৃহত্তম শক্তিগুলোর একটির এমন রাজনৈতিক সংকট পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য উদ্বেগজনক বার্তা বহন করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্রান্সের নেতৃত্ব সংকট ইউরোপের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণ, অভিবাসন ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিরক্ষা কৌশলেও প্রভাব ফেলতে পারে।

মাত্র এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সরকার পতন ফরাসি রাজনীতিতে গভীর অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের কঠিন পরীক্ষার মুখে। ফ্রান্সের জনগণও অপেক্ষায়—দেশটি কি আবারও অস্থায়ী সরকারের চক্রে ঘুরপাক খাবে, নাকি অবশেষে স্থিতিশীলতার পথে ফিরবে? সূত্র: বিবিসি
 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন