শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ: এইচআরডব্লিউ
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫:২৫, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৫:৩৪, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ছবি: সংগৃহীত
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড গুরুতর মানবাধিকার উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে বলে মনে করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ওই বিচারকাজ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটির
সোমবারের (১৭ নভেম্বর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ২০২৪ সালের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছেন ওই ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার তৃতীয় আসামি সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন কারাগারে আছেন। তিনি প্রসিকিউশনের সাক্ষী (রাজসাক্ষী) হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাকে সাজা কমিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল- দুজনেরই অনুপস্থিতিতে এ বিচার করা হয়েছে। তারা নিজেদের পছন্দের আইনজীবীর প্রতিনিধিত্ব পাননি। আদালত তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, যা গুরুতর মানবাধিকার উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরডব্লিউ বলেছে, যারা নির্যাতন ও দমন–পীড়নের জন্য দায়ী, তাদের যথাযথভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তবে বিচারকাজ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ এবং নিজের পছন্দের আইনজীবীর প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় বিচারপ্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, প্রসিকিউশন ৫৪ জন সাক্ষী হাজির করেছিলেন। তাদের প্রায় অর্ধেকই বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যরা ছিলেন ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারের সদস্য। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং ছিল। যেখানে তিনি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করা হয়।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আসামিদের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি। তিনি সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলেও অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করেননি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, হাসিনার দমনমূলক শাসন নিয়ে বাংলাদেশে এখনো ক্ষোভ ও বেদনা বিদ্যমান। তবে সব ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়বিচারের মানদণ্ড মেনে চলা আবশ্যক।
তিনি বলেন, হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত ভয়ংকর নির্যাতন-নিপীড়নের জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। আর তা হতে হবে নিরপেক্ষ তদন্ত ও গ্রহণযোগ্য বিচারের মাধ্যমে।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখেন, যা অবশ্যই প্রকৃত স্বাধীন ও ন্যায়সংগত বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা মানে আসামিদের অধিকার রক্ষা করাও। এর মধ্যে রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করা, যা স্বভাবগতভাবে নির্মম ও অপরিবর্তনীয়।
