শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

আলী রীয়াজ

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত দুঃখজনক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭:৩৬, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত দুঃখজনক

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া না দেখে তাতে স্বাক্ষর করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তরুণ প্রজন্মনির্ভর এই দলের সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে স্থাপিত কমিশনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,‘আমরা বুঝতে পারি, এটা তাদের একটি রাজনৈতিক অবস্থান। তবে আমরা এখনো আশাবাদী যে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এনসিপি শেষ পর্যন্ত সনদে স্বাক্ষর করবে।’

অধ্যাপক আলী রীয়াজের মতে, জুলাই সনদ দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হতে পারে।

এনসিপির তিন দাবি-
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই সনদকে ঘিরে তিনটি দাবি উত্থাপন করেন।
১. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের টেক্সট ও গণভোটের প্রশ্ন চূড়ান্ত করে জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে;
২. আদেশের খসড়া জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন;
৩. গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদে সমর্থন জানায়, তবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর আর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই জনগণ যেন জানে, সনদের বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি কী। জনগণের অনুমোদন ছাড়া কোনো দলই এ বিষয়ে স্বাক্ষর করা উচিত নয়।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষে যত দ্রুত সম্ভব সরকারের কাছে বাস্তবায়নের সুপারিশ পাঠানো হবে। কমিশন মনে করে, এতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের রূপরেখা স্পষ্ট হবে এবং পরবর্তী সরকার তার ভিত্তিতে সাংবিধানিক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন,‘কমিশন আগেই জানিয়েছে, সনদ স্বাক্ষরের পরপরই বাস্তবায়নের প্রস্তাব সরকারকে দেওয়া হবে। তাই আমরা আশা করছি এনসিপি শেষ পর্যন্ত সেই ঐকমত্যে যুক্ত হবে।’

জুলাই সনদের ৮৪টি প্রস্তাবের মধ্যে মাত্র একটিতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ জানিয়েছে এনসিপি। তাদের আপত্তি নারী প্রতিনিধিত্বের কোটা নিয়ে। কমিশনের প্রস্তাবে সংসদের ৫ শতাংশ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে, আর এনসিপি দাবি করছে ১৫ শতাংশ আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে।

কমিশনের পক্ষ থেকে এই ভিন্নমতকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। অধ্যাপক রীয়াজ বলেন,‘তাদের মতভেদ শুধুমাত্র নারী আসনসংক্রান্ত। আমাদের সংস্কার প্রস্তাবের মূল বিষয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তারা একটি গঠনমূলক রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

জুলাই জাতীয় সনদ’ হলো একটি ঐকমত্যভিত্তিক রূপরেখা, যার লক্ষ্য নতুন নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার, প্রশাসনিক পুনর্গঠন ও ভবিষ্যৎ সংবিধান সংশোধনের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করা। ৮৪ দফা প্রস্তাবনাসমৃদ্ধ এই সনদটি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এখন চূড়ান্ত অবস্থান নিচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির অংশগ্রহণ না থাকলে সনদটি রাজনৈতিকভাবে কিছুটা দুর্বল হতে পারে। তবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ আশাবাদী—আলোচনা ও যুক্তির মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য গড়ে উঠবে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন