শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

শহীদ মিনারে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা

ঢাবি প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ১৪:১৫, ১১ অক্টোবর ২০২৫

শহীদ মিনারে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে সর্বস্তরের মানুষ। শনিবার সকালে জাতীয় কবিতা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় তার মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখক, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষ একে একে শ্রদ্ধা জানান।

অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন,“একজন শিক্ষক, একজন লেখক, একজন বিশ্লেষক আমাদের মধ্য থেকে চলে গেছেন। আমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল কিছুটা পেশাগত, কিন্তু বেশিরভাগটাই ছিল ব্যক্তিগত। স্যার এমন একজন মানুষ ছিলেন যাকে সবাই সম্মান করতেন—তার জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সততার জন্য।”
তিনি আরও বলেন,“তিনি পরিবেশ বিষয়ক অনেক ইস্যুতে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। অনেক বিবৃতিতে আমরা যৌথভাবে স্বাক্ষর করেছি, আবার কোনো কোনো সময় তিনি স্বাক্ষর করেননি—কারণ সেটা তাঁর নীতিগত অবস্থান থেকে নেওয়া সিদ্ধান্ত ছিল, ব্যক্তিগত বিরোধ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ তাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষককে হারালো।”

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল অধ্যাপক মনজুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণে বলেন,“আমি স্যারের খুব কাছের মানুষ ছিলাম। তাকে যখনই দেখতাম, সেই মিষ্টি হাসিটা মন ছুঁয়ে যেত। আমার মনে হতো, কারও আত্মা যদি পরিষ্কার না হয়, তবে এমন হাসি দেওয়া সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন,“স্যার ছিলেন অত্যন্ত নির্লোভ ও নীতিনিষ্ঠ মানুষ। মতের পার্থক্য থাকলেও কখনও সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি করেননি। তিনি নিজের বিশ্বাসে অটল ছিলেন, এবং কোনো লোভে নয়—শুধু বিবেকের তাগিদেই কাজ করতেন।”
ড. আসিফ নজরুল অধ্যাপক মনজুরুল ইসলামকে মহান লেখক, অসাধারণ চিত্রসমালোচক ও নতুন লেখকদের পরম শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,“বাংলাদেশে আমি খুব কম মানুষকেই দেখেছি, যারা জীবিত অন্য লেখকদের এত আন্তরিকভাবে প্রশংসা করেছেন।”
শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা, এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণজুড়ে নেমে আসে শোকের আবহ—সবাই যেন একস্বরেই বলছিলেন, ‘মনজুরুল স্যার আমাদের আলোকবর্তিকা ছিলেন।’
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্রসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও ছাত্রছাত্রী রেখে গেছেন।
 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন