বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কাটেনি মতানৈক্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২:৪৪, ৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৪:১১, ৯ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কাটেনি মতানৈক্য

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত অবধি চলা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শেষেও মতানৈক্য রয়েই গেছে। গণভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সবাই একমত হলেও, ভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে এক জায়গায় আসতে পারেনি কেউ।

বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে একটি প্যাকেজ প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেবে বলে জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।

বুধবার কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে এ নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠক রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত চলে। এর আগে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন।

জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চায় বিএনপি ও অন্যান্যরা

বৈঠকে বিএনপি গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনেই নেওয়ার পক্ষে মত দেয়। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি চায় একটি বিশেষ সংবিধান আদেশ বা ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ এর মাধ্যমে নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠিত হোক।

এ ব্যাপারে সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন বাস্তবসম্মত নয়। এতে সময় ও অর্থ ব্যয় বাড়বে এবং নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “গণভোটে জনগণ যদি সনদ অনুমোদন করে, তবে পরবর্তী সংসদ বাধ্য থাকবে জুলাই সনদের ধারাগুলো বাস্তবায়ন করতে।”

গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ ও এলডিপি জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে। তাদের মতে, এতে সময়, অর্থ ও প্রশাসনিক জটিলতা কমবে।

আগেই গণভোট চায় জামায়াত-এনসিপি

জামায়াতের প্রতিনিধি আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ”বিশেষ সংবিধান আদেশ বা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রয়োজন আছে। এই আদেশে গণভোটের কথা বলা থাকবে। তফসিলে জুলাই সনদ থাকবে। আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে। আর আগামী সংসদের দুটি ক্ষমতা থাকবে। একটি সাধারণ সংসদের ক্ষমতা অন্যটি কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার বা গাঠনিক ক্ষমতা। সংসদের প্রথম অধিবশেনে এই ক্ষমতা থাকবে। দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে সাধারণ সংসদ কাজ করবে। এভাবে হলে সংস্কার টেকসই হবে।’

তিনি বলেন, ‘যে কয়টি বিষয়ে ভিন্নমত আছে সেগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো না হলে সংস্কার মুখ থুবড়ে পড়বে। তিনি বলেন, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে হতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত নিলে আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে গণভোট করা সম্ভব।’

সংলাপে এনসিপি মত দেয়, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে প্রক্রিয়াটি বেশি গ্রহণযোগ্য হবে। এ ব্যাপারে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, “সংস্কারগুলো টেকসই করতে হলে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা দিতে হবে, যাতে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের এখতিয়ার থাকে।”

এনসিপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, “নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমত কমিয়ে আনতে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে—এতে ঐক্যমত্য বাড়বে।”

বিশেষজ্ঞদের পাঁচ প্রস্তাব

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের আগে বুধবার দুপুর ১২টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে কমিশন। সেখানে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিভিন্ন উপায় নিয়ে কথা হয়।

বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা পাঁচটি প্রস্তাব দেন- ১. জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ আদেশ জারি; ২. একই আদেশের ভিত্তিতে গণভোট আয়োজন; ৩. গণভোটে দুটি পৃথক প্রশ্ন রাখা; ৪. নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও সংসদ গঠন; ৫. গণভোটে অনুমোদনের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সনদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্তি।

সরকারকে দ্রুত পরামর্শ দেবে কমিশন

বৈঠক শেষে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সারাদিনের আলোচনার সারাংশ নিয়েছি। সরকারকে দ্রুত পরামর্শ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

তিনি বলেন, “সব দল একমত যে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সংসদকে সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা দিতে হবে। তবে গণভোটের দিনক্ষণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।”

আজ নিজেরা বসবে কমিশন

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) কমিশন নিজস্ব বৈঠক করবে। সেখানে সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ হস্তান্তরের খসড়া অনুমোদন করা হবে।

এই সুপারিশপত্র আগামী ১২ অক্টোবরের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে।

কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৫ অক্টোবর। এর আগে তারা ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষরদান অনুষ্ঠান’ আয়োজনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন