শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

খাগড়াছড়িতে অস্থিরতা ও সংঘাতে ডাকসুর উদ্বেগ

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১:৪৫, ১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২৩:২৮, ১ অক্টোবর ২০২৫

খাগড়াছড়িতে অস্থিরতা ও সংঘাতে ডাকসুর উদ্বেগ

খাগড়াছড়িতে সহিংসতা ও চলমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

ডাকসু বলেছে, স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে যদি ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয়, তবে অপরাধীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, যদি প্রমাণিত হয় ঘটনাটি সাজানো বা পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে, তবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বুধবার (১ অক্টোবর) ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ ও দাবি জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ এবং পরবর্তী সময়ে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ এর মধ্যে শয়ন শীল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মামলার এজাহারে উল্লেখিত সময়ে গ্রেপ্তার শয়ন শীল খাগড়াছড়ি বাজারের বিভিন্ন দোকানে কেনাকাটা করছিলেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ঘটনায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক ডা. জয়া চাকমা প্রতিবেদনে ‘ওই ছাত্রীর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। এমনকি সে ধর্ষণের শিকারও হয়নি’ উল্লেখ করেছেন। প্রতিবেদনে আলামত পরীক্ষার ১০টি সূচক ‘স্বাভাবিক’ বলা হয়েছে। এমন পরস্পরবিরোধী তথ্য ও অসঙ্গতির কারণে ঘটনাটি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। 

এমতাবস্থায়, ডাকসু জোর দাবি জানাচ্ছে—স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে যদি ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয়, তবে অপরাধীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, যদি প্রমাণিত হয়—ঘটনাটি সাজানো বা পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়েছে, তবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে ‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিয়মতান্ত্রিক ও আইনানুগ প্রক্রিয়া না মেনে সুসংগঠিতভাবে অবরোধ, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট, ঘরবাড়ি পোড়ানো, পর্যটক হয়রানি এবং জাতিগত সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া দুঃখজনক’ মন্তব্য করা হয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পরবর্তী সময়ে চলমান অস্থিরতা ও সংঘাতে আথুই মারমা, আথ্রাউ মারমা এবং তৈইচিং মারমা নামে তিন জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। ডাকসু পার্বত্য অঞ্চলে সংঘটিত হামলা, সশস্ত্র সংঘাত ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একইসঙ্গে, শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে। বিভিন্ন স্থানে সুসংগঠিত হামলা ও তিন নাগরিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছে।

ডাকসুর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধর্ষণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো অপরাধীর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক ও আইনানুগভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পরিবর্তে বিষয়টিকে অবরোধ ও জাতিগত সংঘাতে রূপ দেওয়ার প্রবণতা সমীচীন নয়। পার্বত্য অঞ্চলে নির্দিষ্ট ঘটনাকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সমাধান না করা, পার্বত্য অঞ্চলের বিদ্যমান সশস্ত্র গ্রুপগুলোর ষড়যন্ত্রকে শনাক্ত করতে ব্যর্থ হওয়া এবং নানা মহলের উদ্দেশপ্রণোদিত রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের ফলে সমাধানের পথ আরও বাধাগ্রস্ত হয়। এর পরিণতিতে প্রায়ই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, ভুক্তভোগী হন এলাকার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও বাঙালিসহ বসবাসরত সব জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ। একইসঙ্গে ন্যায়বিচারের পথও গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ ধরনের গুরুতর অভিযোগকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়া এবং অপতৎপরতাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে না পারা—বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও বাঙালিসহ সব জনগোষ্ঠীর বেসামরিক নাগরিকদের যথাযথ নিরাপত্তা এবং অধিকার নিশ্চিত করতে না পারা মূলত প্রশাসনের সীমাহীন অদক্ষতার অভাবকে প্রকাশ করে।’

ডাকসুর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রশাসনের এই ব্যর্থতা এবং অপতৎপরতাকারীদের উসকানি—উভয়ই দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন এবং পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। অন্যদিকে, ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর অপতৎপরতা এবং উসকানি এখনও বিদ্যমান। এই অপতৎপরতা ও উসকানি বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করছে এবং জাতিগত সংঘাতে রূপান্তরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’ 

বিজ্ঞপ্তিতে ডাকসু বলে, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, দেশের এই সংকটময় সময়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল-মতের একাধিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পাহাড়ে ‘গণহত্যার’ আহ্বান জানাচ্ছেন। আমরা এ ধরনের জেনোসাইডাল মনোভাবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”

ডাকসু আরও বলে, ‘একাধিক সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী গ্রুপের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের সফল বহিঃপ্রকাশ বাংলাদেশের এক দশমাংশ অঞ্চল তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলে এবং এই অঞ্চলে বসবাসরত সব জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ 

বিজ্ঞপ্তিতে ডাকসু বলে, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখিয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সেই বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমেই শহীদ আবু সাঈদ, রিয়া গোপ এবং অন্যদের ত্যাগের যথার্থ মর্যাদা দেওয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশ কোনও একক জাতিগোষ্ঠীর নয় বরং সব নাগরিকের সমান অধিকার ও মর্যাদার দেশ। তাই দেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’

সম্পর্কিত বিষয়:

আরও পড়ুন