একশনএইডের গবেষণা
রোহিঙ্গা নারী ও মেয়েদের জন্য জরুরি সুরক্ষার প্রয়োজন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:১২, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

একশনএইড বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী মেয়েদের ভয়াবহ সুরক্ষা সংকট। যৌন হয়রানি, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ আজ ক্যাম্পজীবনের ‘স্বাভাবিক’ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক (৪৮%) মনে করেন—পুরুষ ও কিশোরদের জন্য জরুরি কাউন্সেলিং কর্মসূচি চালু করা দরকার।
গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য ও মাদকের বিস্তার নারী-শিশুর নিরাপত্তা ও সুস্থতাকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলছে।
গবেষণার মূল ফলাফল
? রোহিঙ্গা নারীদের বড় অংশ (৫০–৮২%) নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
? তরুণীদের মধ্যে তৃতীয় দেশে অভিবাসনের আকাঙ্ক্ষা বেশি।
? প্রায় আট বছর ধরে বাংলাদেশে আশ্রিত নারীরা এখনও বহুমুখী সহিংসতার মুখে।
? নারী-বান্ধব অবকাঠামো (আলাদা টয়লেট, গোসলখানা, আলো) নেই পর্যাপ্ত।
? পুরুষদের অসংলগ্নতা এবং নারীদের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা বড় বাধা।
একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন—
“রোহিঙ্গা নারীরা আট বছর ধরে শিবিরে বসবাস করছেন। প্রাথমিক শেল্টার পেলেও সহিংসতার ধরন পাল্টেছে, কমেনি। আজই কৌশলগত পরিবর্তন এনে জেন্ডার-সংবেদনশীল উদ্যোগ নিতে হবে।”
ইউএন উইমেন-এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ গীতাঞ্জলি সিং বলেন, সুরক্ষাকে কেবল নারী ও মেয়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সকল ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য নিশ্চিত করতে হবে।
ইউএনএইচসিআর-এর ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জুলিয়েট মুরেকেইসনি জোর দিয়ে বলেন—
“নারীদের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা ও পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতি এখনও বড় চ্যালেঞ্জ।”
আইআরসি-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিনা রহমান সতর্ক করে দেন—যুক্তরাষ্ট্রের তহবিল কমে যাওয়ায় জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা বাড়তে পারে।
করণীয় ও সুপারিশ
যথাযথ আলো, নিরাপদ ও জেন্ডার-ভিত্তিক পৃথক টয়লেট ও গোসলের স্থান।
নারী নিরাপত্তা কর্মী ও নারী-নেতৃত্বাধীন সুরক্ষা কমিটি গঠন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম জোরদার করে সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য রোধ।
মর্যাদাপূর্ণ নারী-বান্ধব রিপোর্টিং ব্যবস্থা।
পুরুষ ও কিশোরদের জন্য কাউন্সেলিং ও সচেতনতা কর্মসূচি।
নারী-বান্ধব স্থান, শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুতির অষ্টম বছরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। গবেষকরা মনে করছেন—মানবিক সাড়া, জলবায়ু কার্যক্রম ও শান্তি-সম্প্রীতির সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া রোহিঙ্গা নারীদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা সম্ভব নয়।