তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে বিএনপির আবেদন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:৩৩, ৫ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৫:১১, ৫ নভেম্বর ২০২৫
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান। ফাইল ছবি
সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আপিল বিভাগে আনুষ্ঠানিক আরজি জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার (৫ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে মামলার অষ্টম দিনের শুনানিতে এই আবেদন করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
তিনি আদালতে বলেন,“তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করায় জাতির ভাগ্যে অমানিশা নেমে এসেছিল। এটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ—অতএব এটি পুনর্বহাল জরুরি।”
বিএনপির শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানি শুরু করেন। শুনানির সময় আদালত জানান, আপিল বিভাগ সাময়িক সমাধান নয়, দীর্ঘমেয়াদি গণতান্ত্রিক কাঠামোর নিশ্চয়তা চায়।
প্রধান বিচারপতি বলেন,“তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দিয়ে শুধু তাৎক্ষণিক সংকট নয়, টেকসই রাজনৈতিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বারবার অস্থিরতা না হয়।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন—“যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা কখন থেকে কার্যকর হবে?”
এর জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, গত দেড় দশকে শাসনব্যবস্থা মানুষের কল্যাণে নয়, বরং নিপীড়নের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে—যার ফলেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতন ঘটে।
১৯৯৬ সালে গৃহীত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়।
কিন্তু ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ওই সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। পরবর্তীতে সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়।
তবে ২০২৪ সালের আগস্টে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। পরে পৃথকভাবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এক মুক্তিযোদ্ধাও একই ধরনের আবেদন দাখিল করেন।
গত ২৭ আগস্ট আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেয়। ২১ অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিক শুনানি শুরু হয়, যা চলমান রয়েছে।
মামলাটিতে আদালতের নিযুক্ত আটজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু)-এর মধ্যে পাঁচজন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পক্ষে মত দেন—ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, টিএইচ খান এবং মাহমুদুল ইসলাম।
অন্যদিকে ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি এর বিপক্ষে মত দেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির ব্যবস্থার সংস্কারের পক্ষে যুক্তি দেন।
গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত হলেও, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল নিয়ে এখন আপিল বিভাগের এই ঐতিহাসিক শুনানিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের মোড় ঘোরানো অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
