১৬ মাসের ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত ভবিষ্যতে অনুসরণ করতে পারবে: প্রধান বিচারপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:১৯, ৫ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৪:২০, ৫ নভেম্বর ২০২৫
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ফাইল ছবি
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, “গত ১৬ মাসে বিচার বিভাগ যে মাননির্ধারক ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, ভবিষ্যতের যেকোনো সরকার সেটি অনুসরণ করতে পারবে।”
নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউতের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ড. রেফাত আহমেদ এই মন্তব্য করেন। বুধবার (৫ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ১৫ বছরের সাংবিধানিক বিচ্যুতির পর বিচার বিভাগের ওপর তিনটি গুরুদায়িত্ব বর্তায়— সংবিধানের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সরকারের আইনিভিত্তিকে সহায়তা প্রদান এবং বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসন পুনরুদ্ধার।
এসময় প্রধান বিচারপতি জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে দায়িত্বগ্রহণের পর তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ প্রণয়ন করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের অনিশ্চিত সময়েও তিনি দিনরাত কাজ করে সংস্কারের বাস্তবায়ন এগিয়ে নেন।
তিনি বলেন, “ঐতিহাসিক রায়, অধ্যাদেশ ও নীতিগত সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানবাদকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।”
প্রধান বিচারপতি বলেন, “রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও বিচার বিভাগীয় সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বিচার বিভাগীয় নেতৃত্বের মধ্যে এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে ‘জাস্টিস-টু-জাস্টিস (জে-টু-জে)’ কূটনীতি আরও শক্তিশালী করা জরুরি।”
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সংস্কারে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছিলেন, সেই রোডম্যাপ কাজে লাগাতে চায় নেপাল। এ উদ্দেশ্যে নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউতের নেতৃত্বাধীন জুডিসিয়াল টিম বাংলাদেশের বিচার বিভাগে গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেছেন, অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন।
তারা প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে অভিভূত হয়েছেন। নেপালের বিচার বিভাগ সংস্কারে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর আশা প্রকাশ করেছেন।
নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত ও তার টিম জুলাই বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের বিচার বিভাগে গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম প্রত্যক্ষকরণ, অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ একাধিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সফর করছেন। গত ১ নভেম্বর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান।
গত ২ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় নেপালের প্রধান বিচারপতি তার সফরসঙ্গীসহ সুপ্রিম কোর্টে আগমন করেন। এ সময় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। সফরকালে নেপালের প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে চালু হওয়া সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইনের কার্যক্রম সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
পরে সকাল সাড়ে ১১টায় নেপালের প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের অনুষ্ঠিত বিচারকার্য প্রত্যক্ষ করেন। এসময় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ৭ জন বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন। নেপালের প্রধান বিচারপতির এজলাসে উপস্থিত উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নেপালের প্রধান বিচারপতি ও তার সঙ্গে আগত প্রতিনিধি দলের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। এ ছাড়া, নেপালের প্রধান বিচারপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
একইদিন দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নেপালের প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘ডিসকাশন অন রোডম্যাপ, রোডশো লেজিসলেটিভ চেঞ্জেস, জুডিসিয়াল ইন্টিগ্রিটে অ্যান্ড পার্টনারশিপ বিল্ডিং’ শীর্ষক আলোচনাসভায় অংশ নেন।
এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় নেপালের প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে একই হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে আরেকটি আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
গত ৩ নভেম্বর সকালে নেপালের প্রধান বিচারপতির জুডিসিয়াল টিম সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরাম ও ল' রিপোর্টার্স ফোরামের মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। সভায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সংস্কার যাত্রায় গণমাধ্যম কী ভূমিকা পালন করেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সাংবাদিকদের সাথে সভা শেষে একইদিন বেলা ১১টায় একই স্থানে ‘ওয়ার্কশপ: জুরিসপ্রুডেন্স ইন ট্রানজিশনাল কনটেক্সট এক্সচেঞ্জেস’ শীর্ষক সভায় অংশ নেন।
