খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের খালাসের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:২৩, ৫ নভেম্বর ২০২৫
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান / ফাইল ছবি
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আসামিদের খালাসের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে আপিল বিভাগ। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৫৯ পৃষ্ঠার এই ঐতিহাসিক রায়টি লিখেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে রায়টি দেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল ও কায়সার কামাল। তাঁদের সহায়তায় ছিলেন জাকির হোসেন ভুঁইয়া ও মাকসুদ উল্লাহ।
সহ-আসামি কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ ও অনিক আর হক উপস্থিত ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, “আপিল ইজ অ্যালাউড”— অর্থাৎ খালেদা জিয়া ও অন্যান্য আসামিদের আপিল মঞ্জুর করা হলো। আদালত একযোগে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন এবং মামলাটিকে “ম্যালিসাস প্রসিকিউশন” বা বিদ্বেষপূর্ণ মামলা হিসেবে আখ্যা দেন।
রায়ের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “এই মামলায় কিছুই ছিল না। হাইকোর্টের রায় ছিল অন্যায়ের প্রতিফলন। আজকের রায়ে প্রমাণ হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আদালত বলেছেন, যারা আপিল করতে পারেননি, যেমন তারেক রহমানসহ অন্যরাও খালাস পেয়েছেন। পুরো জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষমূলক আচরণ ছিল, তার অবসান হলো।”
অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, “মোট চারটি আপিল মঞ্জুর করা হয়েছে। হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের রায় বাতিল হয়েছে। যেহেতু মামলাটিকে আদালত বিদ্বেষপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন, তাই যারা আপিল করতে পারেননি, তারাও খালাস পেয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন তারেক রহমান ও কামাল সিদ্দিকী।”
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই মামলায় তারেক রহমান, সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে সাজা দেওয়া হয়।
এরপর ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করেন। ২৮ মার্চ দুদক সাজা বৃদ্ধির আবেদন করলে আদালত রুল জারি করে। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগ ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর খালেদা জিয়ার আপিলের অনুমতি দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে। এর ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে আপিল বিভাগ সর্বসম্মতিক্রমে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে সকল আসামিকে খালাস দেন।
আইনজীবী মহলে এই রায়কে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি “বিচারিক স্বাধীনতার দৃষ্টান্ত” হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ সাত বছরের আইনি লড়াই শেষে এই রায় শুধু রাজনৈতিক নয়, ন্যায়বিচারের জয়েরও প্রতীক।
