দেশে প্রথম আইরিশ শিল্পীর একক প্রদর্শনী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫:৫৩, ৫ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৭:২০, ৫ নভেম্বর ২০২৫
আইরিশ শিল্পী উনা হাইল্যান্ডের একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী অ্যান ডেনায়ার। ছবি: সমাজকাল
খ্যাতনামা আইরিশ শিল্পী উনা হাইল্যান্ডের একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী অ্যান ডেনায়ার: ভিজ্যুয়াল পয়েমস অব দ্য ডিসপোজেসড মঙ্গলবার রাজধানীর বারিধারার গার্ডেন গ্যালারিতে উদ্বোধন করা হয়েছে—যা বাংলাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো কোনো আইরিশ শিল্পীর একক প্রদর্শনী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলি, যিনি নয়াদিল্লি থেকে দায়িত্ব পালন করছেন, বলেন, “উনা হাইল্যান্ড ঢাকায় তিন সপ্তাহের জন্য একটি শিল্প ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন—তিনিই প্রথম আইরিশ শিল্পী যিনি এ ধরনের কর্মসূচির জন্য বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি ২৫ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন পেশাদার ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট।”
অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ডের অনারারি কনসাল মাসুদ খান, যিনি ইভেন্টের আয়োজকও ছিলেন।
এই শিল্পী-আবাসন কর্মসূচি গ্যালারি কসমস ও আয়ারল্যান্ড দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে আয়ারল্যান্ড -বাংলাদেশ আর্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়। এর লক্ষ্য দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংলাপ ও শিল্প সহযোগিতাকে জোরদার করা।
কেভিন কেলি বলেন, “আমাদের ঢাকায় দূতাবাস না থাকলেও, বাংলাদেশে আমাদের দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্ব, উন্নয়ন সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা চাই এ সম্পর্ক আরও গভীর হোক।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকায় অবস্থানকালে উনা অনুসন্ধান করছেন কীভাবে শিল্প স্মৃতি, নিরাময় ও সমষ্টিগত প্রতিফলনের সঙ্গে যুক্ত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃজনশীলতার নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি তাকে অনুপ্রাণিত করেছে।”
রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই কর্মসূচির সফলতা ভবিষ্যতে দুই দেশের শিল্পীদের মধ্যে আরও নিবিড় বিনিময়ের পথ খুলে দেবে—“শুধু আইরিশ শিল্পীরা বাংলাদেশে নয়, বাংলাদেশি শিল্পীরাও আয়ারল্যান্ডে যাবেন।”
অনারারি কনসাল মাসুদ খান অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, “শুরুতে আমি একটু চিন্তিত ছিলাম— সময়টা যথেষ্ট হবে কিনা, সব কিছু ঠিকভাবে সম্পন্ন হবে কিনা। কিন্তু আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আর বিশেষ করে উনার নিরলস পরিশ্রমের কারণে সব কিছু চমৎকারভাবে সম্পন্ন হয়েছে।”
তিনি বলেন, “উনা অত্যন্ত পরিশ্রমী, নিবেদিতপ্রাণ এবং অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্বের অধিকারী। সবাই তার প্রশংসা করেছেন, এবং আমি আশা করি তিনি আবার বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনাকেও তিনি উল্লেখ করেন “একটি দারুণ অভিজ্ঞতা” হিসেবে।
তিনি আরও বলেন, “শিল্পীদের জন্য স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি— যাতে তারা তাদের শিল্পচর্চা ও উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে পারেন। আয়ারল্যান্ড এ বিষয়ে অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেছে, যা অনুপ্রেরণাদায়ক।”
উনা হাইল্যান্ড এমএমএ ইন আর্টস রিসার্চ অ্যান্ড কোলবোরেশন, টিসিডিডিগ্রিধারী একজন পেশাদার ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট। তিনি ও’ ম্যালেই অ্যাওয়ার্ড, এইজিলিটি অ্যাওয়ার্ড এবং উশো রেসিডেন্সি অ্যান্ড অ্যাকুইসিশান প্রাইজ ২০২৫সহ বহু পুরস্কার অর্জন করেছেন।
তিনি দক্ষিণ কোরিয়া, সাও পাওলো থেকে শুরু করে ভেনিস বিয়েনালে (২০২৪) পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
লন্ডনের এর বিশিষ্ট সদস্য হাইল্যান্ডের শিল্পচর্চায় প্রিন্টমেকিং, ভাস্কর্য ও ইনস্টলেশনের পরীক্ষামূলক মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।
এই প্রদর্শনীতে তিনি আয়ারল্যান্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও বাংলাদেশের নগর ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের কাব্যিক সংলাপকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ঢাকায় অবস্থানকালে সৃষ্ট এই নতুন কাজগুলোতে প্রতিফলিত হয়েছে স্থানচ্যুতি, আত্মপরিচয় ও সৃজনশীল রূপান্তরের থিম।
উনা বলেন, “আমি খুব আনন্দিত যে আমি এই প্রকল্পে অংশ নেওয়া প্রথম আইরিশ শিল্পী। আশা করি আমি শেষজন নই—কারণ আয়ারল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সংযোগ আছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, "আমি চাই ভবিষ্যতে আরও বাংলাদেশি শিল্পী আয়ারল্যান্ডে আসুক। আমি এখানে যেসব প্রতিভাবান শিল্পীর সঙ্গে দেখা করেছি, তাদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বে আমি সত্যিই অভিভূত।”
উনা বলেন, “ঢাকার শিল্পজগৎ অত্যন্ত প্রাণবন্ত—আমি এতটা সমৃদ্ধ শিল্পচর্চা প্রত্যাশা করিনি। এখানে কাজ করা সত্যিই আনন্দের।”
প্রদর্শনীটি ৫ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যালারি কসমস, কসমস সেন্টার, ৬৯/১, নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
