বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

| ১৪ কার্তিক ১৪৩২

অর্থনীতিবিদদের বিবৃতি

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ১৭:৪৮, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৯:০৯, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োজন

২০১৩ সালের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের মাধ্যমে ২০০৫ সালে শক্তিশালী করে সরকার। দুই দশক ধরে এই আইন বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতায় আইনটির কিছু দুর্বলতা চিহ্নিত হয়েছে এবং সময়ের সাথে কিছু নতুন চ্যলেঞ্জ সামনে এসেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার স্বার্থে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা।

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনকে সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন তারা।  

আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর ২০২৫) বিকেলে গণমাধ্যমে তারা এ বিবৃতিটি পাঠিয়েছে।

বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। কিন্তু এই উদ্যোগকে ব্যহত করতে সিগারেট কোম্পানি বরাবরের মতো নানা বিভ্রান্তকর ও মিথ্যা প্রচারণা চলাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন ও নীতি প্রণয়ন ও সরকারের অন্যান্য পদক্ষেপকে ব্যহত করতে তামাক কোম্পানিগুলো সব সময় এ ধরনের অপকৌশল গ্রহণ করে থাকে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে সিগারেট কোম্পানিগুলো। তামাকজাত দ্রবের মূল্য ও কর বৃদ্ধির বিরোধিতা করতেও তারা একই কথা বলে থাকে। সিগারেট কোম্পানির এ ধরনের কাজের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং নাগরিকদের জন্য প্রকৃত তথ্য তুলে ধরছি।

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক খাত থেকে রাজস্ব আয় ছিল ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। পরবর্তী অর্থবছর ২০০৫-০৬-এ রাজস্ব আদায় হয় ৩ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। পরবর্তী বছরগুলোতে এই বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে। ২০১৩ সালে সরকার আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে অধিকতর শক্তিশালী করে। সে বছর তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা এবং অদ্যবধি এই বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ (২০২৪-২৫) অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪০ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। অতএব এটা পরিষ্কার যে তামাক নিয়ন্ত্রণ হলেও তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও করহার বাড়ানো হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ে এবং তামাক ব্যবহার কমার মাধ্যমে রোগ ও মৃত্যু কমে।

তামাকজনিত ক্ষতি সম্পর্কে তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে তামাক ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ব্যয় ছিল ৮৬ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ৬৫ হাজার কোটি টাকাই তামাকজনিত স্বাস্থ্য ব্যয়। একই সময়ে তামাক থেকে রাজস্ব আয় ছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা; যা তামাক ব্যবহারের কারণে হওয়া অর্থনৈতিক ক্ষতির অর্ধেকেরও কম। দেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসা খরচ জোগাতে গিয়ে প্রতিবছর দেশের প্রায় ৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, তামাক কোম্পানি সবসময় এসব তথ্য আড়াল করতে চায়। তারা একটি প্রাণঘাতী পণ্যের ব্যবসা করে মুনাফা অর্জনের জন্য। মানুষের মৃত্যু বা ক্ষতি তাদের বিবেচ্য নয়। মিথ্যাচারের মাধ্যমে তারা প্রকৃত সত্যকে আড়াল করছে। শিশু-কিশোরদের তামাকের নেশায় আকৃষ্ট করতে তারা বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ধূমপানের স্থান তৈরি করে দিচ্ছে, মূল্যবৃদ্ধি ও খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধের উদ্যোগকে ব্যাহত করছে, বিক্রয়স্থলে আগ্রাসী বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, দেশে ভেপিং ও ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়াতে যুবকদের নিয়ে গোপনে ভেপিং মেলার আয়োজন করছে, আইন শক্তিশালী করতে কার্যকর প্রস্তাবগুলোর বিরোধিতা করছে; যা তরুণ প্রজন্মকে তামাকে আসক্ত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ধ্বংসের পাঁয়তারা বলেও বিবৃতে জানিয়েছেন তারা।

এতে বলা হয়, এমতাবস্থায় সিগারেট কোম্পানির ভ্রান্ত প্রচারণা থেকে নীতি নির্ধারকদের সতর্ক থাকা এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় অবিলম্বে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দেশে একটি কার্যকর ও টেকসই তামাক কর ব্যবস্থা প্রবর্তণের জন্য একটি কমপ্রিহেন্সিভ তামাক করনীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিবৃতিতে ১১ জন অর্থনীতিবিদ স্বাক্ষর করেন। তারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. নাজমা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর পরিচালক ড. মাসুদা ইয়াসমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান, অধ্যাপক ড. রুমানা হক, অধ্যাপক ড. অতনু রব্বানী, সহযোগী অধ্যাপক এসএম আব্দুল্লাহ, সহযোগী অধ্যাপক ড. সুজানা করিম, সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হুসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিকসের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জাহিদুল কাইয়ুম, স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিনা সিদ্দিকা।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন