শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

| ৮ কার্তিক ১৪৩২

টেকনাফে স্কুল শিক্ষার্থী রিয়াজ অপহৃত, মুক্তিপণ দাবি ১২ লাখ টাকা

উখিয়া-টেকনাফ প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ১৯:৫৪, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

টেকনাফে স্কুল শিক্ষার্থী রিয়াজ অপহৃত, মুক্তিপণ দাবি ১২ লাখ টাকা

স্কুল শিক্ষার্থী রিয়াজের কার্ড। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের টেকনাফে জীবিকার তাগিদে টমটম চালানো সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীক। তাকে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। তিন দিন পার হলেও এখনো নিখোঁজ রয়েছে ওই কিশোর। অপহরণকারীরা ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

অপহৃত শিক্ষার্থী মো. রিয়াজ (১৪) টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে। সে স্থানীয় লেদা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

রিয়াজের বাবা আব্দুর রশিদ সমাজকালকে জানান, “গত ২১ অক্টোবর বিদ্যালয় ছুটির পর রিয়াজ বাড়ি ফিরে প্রতিদিনের মতো টমটম নিয়ে বের হয়। কিন্তু রাত পেরিয়ে গেলেও সে আর ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো সন্ধান পাইনি। পরদিন টেকনাফ থানায় অভিযোগ করি। দুই দিন পর গভীর রাতে এক অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। ওরা বলে— ‘ছেলেকে জীবিত পেতে হলে ১২ লাখ টাকা দিতে হবে, না দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে।’ আমরা গরীব মানুষ, দিনমজুরির টাকায় সংসার চলে। এত টাকা কোথা থেকে আনব বুঝতে পারছি না।”

স্থানীয় বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, “এলাকায় অপহরণ ও ডাকাতির ঘটনা এখন নিয়মিত। রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে সক্রিয় কয়েকটি অপহরণকারী চক্র মানুষের জীবনে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। মুক্তিপণ না দিলে তারা কাউকে জীবিত ফেরত দেয় না।”

লেদা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার জামাল উদ্দিন বলেন, “রিয়াজ আমাদের নিয়মিত ছাত্র। দরিদ্র পরিবার থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি জীবিকার জন্য টমটম চালাত। এমন মেধাবী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীর অপহরণ মর্মান্তিক। আমরা তার নিরাপদ প্রত্যাবর্তন চাই।”

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আলী বলেন, “টেকনাফে অপহরণ এখন একটি ‘বাণিজ্যে’ পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের চোখের সামনে এসব চলছে, কিন্তু দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। রিয়াজকে উদ্ধারে অবিলম্বে অভিযান চালানো জরুরি।”

এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিমেল রায় বলেন, “অপহৃত শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আমরা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।”

স্থানীয়দের ভাষ্য, গত এক বছরে টেকনাফের পাহাড়ি অঞ্চল ও সীমান্তবর্তী এলাকায় কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ দেড় থেকে দুই শতাধিক মানুষ অপহরণের শিকার হয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুক্তিপণ দিয়ে তারা মুক্তি পান; যারা পারেননি, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অপহরণ ও ডাকাতির এই অব্যাহত তাণ্ডবে টেকনাফের সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।

আরও পড়ুন