নাটোরের রাজমিস্ত্রির বাড়িতে মার্কিন নাগরিক
নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬:৩২, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভার্চুয়াল জগতে শুরু হওয়া এক বন্ধুত্ব বাস্তবের উষ্ণতায় রূপ নিল নাটোরের প্রত্যন্ত গ্রামে। যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের নাগরিক ও ব্যবসায়ী তেরি পারসন ছুটে এসেছেন বাংলাদেশের নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার চর বালশা গ্রামের রাজমিস্ত্রি সেতু মোল্লার বাড়িতে।
প্রায় ২৫ দিন আগে সেতু মোল্লার ফেসবুক ভিডিওতে একটি লাইক দেন তেরি পারসন। সেখান থেকেই শুরু হয় কথোপকথন, বন্ধুত্ব, আর সেই বন্ধুত্বের আহ্বানে এবার আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন তেরি।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ভোরে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর তাকে নিজ গ্রামে নিয়ে যান সেতু মোল্লা। পেশায় রাজমিস্ত্রি ও ভ্যানচালক এই তরুণ অবসরে নিজের ফেসবুক পেজে ভিডিও তৈরি করেন—আর সেই ভিডিওই বন্ধুত্বের সেতু হয়ে উঠেছে দুই মহাদেশের মধ্যে।
১৫ দিনের ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন তেরি পারসন। সঙ্গে এনেছেন বন্ধুর জন্য উপহার, স্থানীয় শিশুদের জন্য খেলনা। গ্রামে পৌঁছেই তিনি মিশে গেছেন সেখানকার মানুষ ও শিশুদের সঙ্গে। স্থানীয় খাবারের মধ্যে মুরগির মাংস ও চা তার সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
বন্ধু সেতু মোল্লার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় গ্রাম ঘুরে দেখছেন তেরি পারসন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে বুঝেছি, সরল মানুষ কতটা হৃদয়বান হতে পারে। এখানকার অতিথিপরায়ণতা ও আন্তরিকতা অসাধারণ। আমেরিকায় জীবন বিলাসী ও ব্যয়বহুল, কিন্তু এখানে মানুষ খুব সাধারণভাবে বাঁচে—আর সেটাই অসাধারণ।’
তিনি জানান, ছয় মাস পর আবারও বাংলাদেশে ফিরে আসতে চান এবং বন্ধুদের বলবেন—‘বাংলাদেশে অবশ্যই ঘুরে যেতে।’
খুবজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুত্বের টানে আমাদের চর বালশা গ্রামের সেতু মোল্লার বাড়িতে একজন মার্কিন নাগরিক এসেছেন। একজন মানুষ আরেকজনের প্রতি ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের বন্ধনে কীভাবে দূরত্ব পেরিয়ে আসে—তেরি পারসন তার জীবন্ত উদাহরণ।’
আরও ১১ দিন বাংলাদেশে থাকবেন এই মার্কিন অতিথি। এ সময় তিনি গ্রামীণ জীবনযাত্রা, স্থানীয় সংস্কৃতি ও মানুষের সহজ-সরল জীবনধারা কাছ থেকে উপভোগ করবেন।
বন্ধুত্বের এই গল্প শুধু দুই বন্ধুর নয়, এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ-আমেরিকার মানবিক বন্ধনের এক অনন্য প্রতীক।