পিআরআই গবেষণা
ব্যাংক ঋনের ৭৮% ঢাকা-চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫:৩৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সম্প্রসারিত হলেও, দেশের ঋণ বণ্টনে ভয়াবহ ভৌগোলিক বৈষম্য রয়ে গেছে বলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
এই গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশের মোট ব্যাংক ঋণের প্রায় ৭৮ শতাংশই কেন্দ্রীভূত ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে, যা বাকি দেশের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ: কী বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব?’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় জানানো হয়, রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ব্যাংক ঋণের প্রায় চার-পঞ্চমাংশ বিতরণ হয়। অথচ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের এসএমই উদ্যোক্তারা (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) ঋণের জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছেন। এর ফলে আঞ্চলিক বৈষম্য, বিনিয়োগ সংকট, এবং কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. আহমদ আহসান বলেন, “ব্যাংকিং খাতের অগ্রগতি হলেও সেটির সুফল সারাদেশে ছড়ায়নি। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে এসএমই খাত এখনও দুর্বল রয়ে গেছে। ফলে অন্তর্ভুক্তিমূলক শিল্পায়নের সম্ভাবনা ক্ষীণ।”
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে নগর শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে, যা আগের সময়কালের তুলনায় পিছিয়ে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৫টি পৌরসভা ৪০টিরও বেশি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে পরিচালিত হয়। ফলে মেয়ররা প্রায় কোনও কার্যকর ক্ষমতা পান না। অবকাঠামো, পানি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবার সমন্বয়ে তারা কার্যত ‘ক্ষমতাহীন’। এই প্রশাসনিক জটিলতা স্থানীয় শাসন ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে তুলছে।
গবেষণায় নীতিনির্ধারকদের জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়—
- ১. স্থানীয় সরকার খাতে বাজেট বরাদ্দ জিডিপির অন্তত ১ শতাংশে উন্নীত করা।
- ২. ঢাকা ও চট্টগ্রামে সম্পদ কর আদায় শক্তিশালী করা (বর্তমানে যথাক্রমে জিডিপির মাত্র ০.১৩% ও ০.০৬%)।
- ৩. বার্ষিক স্কোরকার্ড চালু করা—যার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের সেবা, বিনিয়োগ পরিবেশ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার মান যাচাই হবে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে জনগণের মাধ্যমে করতে হবে। বিকেন্দ্রীকরণ মানে শুধু ক্ষমতার নয়, সুবিধারও বিকেন্দ্রীকরণ। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু বা এক্সপ্রেসওয়ে—এসব অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমানে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি ঘটেনি। প্রকৃত উন্নয়নের জন্য স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন জরুরি।
গবেষকরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক ঋণ ও বিনিয়োগ বণ্টন যদি পরিবর্তন না হয়, তবে দেশের সার্বিক শিল্পায়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি থেমে যাবে। বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়