শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

| ১১ আশ্বিন ১৪৩২

দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারী ৫৪%

চ্যালেঞ্জ সাইবার নিরাপত্তা ও আস্থার ঘাটতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯:৫০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০১:৫২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারী ৫৪%

বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতের সম্ভাবনা ব্যাপক হলেও নীতি সহায়তার অভাব, আস্থাহীনতা, দুর্বল অবকাঠামো এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে এ খাত পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারছে না। এ মন্তব্য উঠে এসেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং: আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যবধান দূরীকরণ’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপের আলোচনা সভায়।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মতিঝিলে ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ডা. মো. এজাজুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার বাড়ছে

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ জানান, দেশে ২০১১ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালুর পর বর্তমানে প্রায় ৫৪ শতাংশ মানুষ এ সেবা ব্যবহার করছে। তবে সাইবার নিরাপত্তা ও ভোক্তাদের আস্থা নিশ্চিত না হওয়ায় পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তার ভাষায়, “ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে আস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, সরকার, বেসরকারি খাত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণে কাজ করছে। তিনি জানান, ডেটা প্রটেকশন অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন এবং ঢাকায় ওয়ান-স্টপ নাগরিক সেবা চালু হয়েছে।

ডা. এজাজুল ইসলাম জানান, আগস্ট পর্যন্ত দেশে ৩ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার মানি সার্কুলেশন হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা রয়েছে ব্যাংকের বাইরে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের মোট লেনদেনের মাত্র ২৭-২৮ শতাংশ ডিজিটাল মাধ্যমে, বাকি ৭০ শতাংশ এখনও প্রথাগত ব্যবস্থায় হচ্ছে।

ডিএমপি’র অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. ইলিয়াস জিকো জানান, প্রতিদিন ১০-২০ কোটি টাকার ডিজিটাল জালিয়াতি ঘটছে।

শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান বলেন, কার্যকর ডিজিটাল ব্যাংক চালুর রোডম্যাপ নেই।

সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী আজিজুর রহমান জানান, দেশের ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ এখনও ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে।

ওমেগা এক্সিম লিমিটেডের পরিচালক রেজওয়ান আলী রপ্তানি-আমদানিতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রস্তাব দেন।

বেটলস্ সাইবার সিকিউরিটির চিফ সাইবার অফিসার শাহী মির্জা ইউনিফাইড সাইবার সিকিউরিটি ফ্রেমওয়ার্ক গঠনের ওপর জোর দেন।

মূল প্রবন্ধে রবি আজিয়াটা পিএলসি’র সানজিদ হাসান জানান, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ২০২৫ সালে ডিজিটাল ব্যাংকিং খাতের বাজার হবে ৪৬৭৮.৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা ২০৩৩ সালে পৌঁছাবে ১১২৩৮.৬ মিলিয়নে। তিনি সাইবার নিরাপত্তা ইকোসিস্টেম শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দেন।

বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীর সংখ্যা ইতিমধ্যেই অর্ধেকের বেশি। তবু সাইবার নিরাপত্তা, ভোক্তার আস্থা ও কার্যকর নীতিমালার ঘাটতি এ খাতকে থামিয়ে রেখেছে। বক্তাদের মতে, সরকার, বেসরকারি খাত ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া দেশের ডিজিটাল ব্যাংকিং খাত পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাবে না।

আরও পড়ুন