থাইল্যান্ডে ৩০০ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টি: মৃত্যু ৩৩ জনের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:৪৯, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
থাইল্যান্ডে অতিবর্ষণের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যা দিন দিন আরও সংকটময় হয়ে উঠছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ডুবে গেছে শহর, বাজার, হাসপাতাল ও বাসাবাড়ি। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে, আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি।
মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে অবস্থিত বাণিজ্যিক শহর হাতইয়াইয়ে মাত্র একদিনে ৩৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে—যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভাষায় গত ৩০০ বছরে সর্বোচ্চ।
ড্রোনচিত্রে দেখা গেছে—হাতইয়াই শহরের গাড়ি পার্কে ডজনেরও বেশি গাড়ি পানিতে ভাসছে। বহু ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা নেই। অনেকে বাধ্য হয়ে নিজেদের বাড়ির ছাদে উঠে উদ্ধারের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।
গত এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে দক্ষিণাঞ্চলের ১০টি প্রদেশেই বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা কয়েক মিলিয়নে পৌঁছালেও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া গেছে মাত্র ১৩ হাজার মানুষকে।
রয়টার্স জানায়, বহু অঞ্চল এখনও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, ফলে ত্রাণ–উদ্ধার তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় থাই সরকার উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দিয়েছে সেনাবাহিনীকে। নৌবাহিনী জানিয়েছে—একটি বিমানবাহী রণতরি, ১৪টি নৌযান, খাদ্য–পানি–ওষুধসহ জরুরি ত্রাণ এবং মোবাইল রান্নাঘর—যা প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার খাবার প্রস্তুত করতে পারবে—এসব পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
প্রয়োজনে বিমানবাহী রণতরীর মেডিক্যাল টিম দিয়ে জাহাজটিকে ‘ভাসমান হাসপাতালে’ রূপান্তর করা হবে।
সংখলা প্রদেশের গভর্নর জানিয়েছেন, নৌকা, জেট স্কি ও উঁচু চাকা–যুক্ত ট্রাক ব্যবহার করে বন্যার পানিতে আটকা মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটিই হাতইয়াই, যা এই প্রদেশেই অবস্থিত।
মঙ্গলবার থাইল্যান্ডের মন্ত্রিসভা সংখলা প্রদেশকে দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করেছে, যাতে দ্রুত জরুরি তহবিল ছাড় করা যায়। এর পরও বহু মানুষ এখনও পানিবন্দি।
অবিরাম বৃষ্টির প্রভাবে থাইল্যান্ডের বাইরে অন্য দেশগুলোও বিপর্যস্ত—ভিয়েতনামে এক সপ্তাহে নিহত ৯৮ জন, মালয়েশিয়ায় ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বাধ্য ১৯ হাজারের বেশি মানুষ, দেশটির উত্তরে ১২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই অতিবৃষ্টির ফলে এশিয়ার অন্যতম বড় মানবিক সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
