বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্র সঙ্গীতের অনন্য নাম শচীন দেব বর্মনের প্য়ান দিন
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬:১৭, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
 
						
									আজ ৩১ অক্টোবর। ইতিহাসের পাতায় এই দিনে বিদায় নিয়েছেন বহু গুণী, শিল্পী, রাজনীতিক, বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক, যাঁদের অবদান আজও বিশ্বজুড়ে অনুরণিত। তাদের স্মৃতির প্রতি সমাজকাল জানাচ্ছে শ্রদ্ধা।বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্র সঙ্গীতের এক অমর নাম। ত্রিপুরার রাজবংশীয় বর্মণ পরিবারের সন্তান শচীন দেববর্মণ তার সুরের জাদুতে ভারতীয় সংগীতকে নতুন মাত্রা দেন।
শচীন দেববর্মণ (১৯০৬–১৯৭৫)
বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্র সঙ্গীতের এক অমর নাম। ত্রিপুরার রাজবংশীয় বর্মণ পরিবারের সন্তান শচীন দেববর্মণ তার সুরের জাদুতে ভারতীয় সংগীতকে নতুন মাত্রা দেন। রবীন্দ্রসংগীত, লোকসঙ্গীত ও আধুনিক ধারার মিশেলে তার সৃষ্টিগুলো পেয়েছে কালজয়ী রূপ। “ওরে মাঝি, তোর বেদনা বোঝে না কেউ”, “ও সজনী, রে” বা “গাঙের ঢেউ ঘরবাড়ি নিলো”— আজও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে তাঁর সুরের রেশ।
ইন্দিরা গান্ধী (১৯১৭–১৯৮৪)
ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, উপমহাদেশের এক ইতিহাস। নেতৃত্ব, সাহস ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় তিনি ছিলেন অনন্য। জরুরি অবস্থা ঘোষণা, বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো এবং দেশকে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করা— এসব তাঁর রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ৩১ অক্টোবর ১৯৮৪, নিজের দেহরক্ষীর গুলিতে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। কিন্তু ইতিহাসে তিনি রয়ে গেছেন ‘মাদার ইন্ডিয়া’ নামেই।
অমৃতা প্রীতম (১৯১৯–২০০৬)
পাঞ্জাবি ভাষার প্রথম আধুনিক নারী কবি ও ঔপন্যাসিক। তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে নারীজীবনের বেদনা, প্রেম ও প্রতিবাদ। বিখ্যাত কবিতা “অজ আখাঁ ওয়ারিস শাহ নুঁ”— পাঞ্জাবের বিভাজনের যন্ত্রণাকে অনবদ্যভাবে প্রকাশ করেছে। অমৃতা প্রীতম ছিলেন সাহসী কণ্ঠস্বর, যিনি প্রেমের মতোই প্রতিবাদের প্রতীক।
শন কনারি (১৯৩০–২০২০)
স্কটিশ কিংবদন্তি অভিনেতা, ‘জেমস বন্ড’ চরিত্রে অভিনয় করে যিনি বিশ্বজুড়ে আইকন হয়ে ওঠেন। তাঁর অভিনয়শৈলী, কণ্ঠস্বর ও ব্যক্তিত্ব তাঁকে হলিউডের ইতিহাসে স্থায়ী স্থান দিয়েছে। Goldfinger, From Russia with Love, The Untouchables প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তিনি রূপ দিয়েছেন এক অদম্য পুরুষতান্ত্রিক নায়ককে, যার মধ্যে ছিল ব্রিটিশ সৌন্দর্য ও রহস্য।
ফাদার পল দ্যতিয়েন (১৯২৪–২০১৬)
বেলজিয়ান যাজক, যিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ভালোবেসে আজীবন বাংলাদেশে থেকেছেন। তাঁর রচিত বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্ম ও বাংলার মুখ প্রভৃতি গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে গবেষণামূলক অবদান হিসেবে স্বীকৃত। তিনি ছিলেন মানবিকতার প্রতীক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির এক আলোকিত দৃষ্টান্ত।
রাজচন্দ্র বসু (১৯০১–১৯৮৭)
ভারতের প্রখ্যাত গণিতবিদ ও পরিসংখ্যানবিদ, যিনি রোনাল্ড ফিশারের সহকর্মী হিসেবে পরিসংখ্যানবিজ্ঞানের পরীক্ষামূলক নকশা তত্ত্বে মৌলিক অবদান রাখেন। তাঁর নামেই পরিচিত “বসু-চৌধুরী তত্ত্ব”, যা আজও বিশ্বজুড়ে পড়ানো হয়।
রবার্ট সেন্ডারসন মুল্লিকেন (১৮৯৬–১৯৮৬)
নোবেলজয়ী মার্কিন পদার্থ ও রসায়নবিদ, যিনি মলিকুলার অরবিটাল তত্ত্ব উদ্ভাবনের জন্য ১৯৬৬ সালে নোবেল পুরস্কার পান। তাঁর কাজ আধুনিক কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রির ভিত্তি স্থাপন করেছে।
সিদ্ধার্থ ঘোষ (১৯৪৮–২০০২)
ভারতীয় বাঙালি কল্পবিজ্ঞান লেখক, যিনি বাংলা পাঠকের মনে সাই-ফাই সাহিত্যের আগ্রহ জাগিয়েছিলেন। তাঁর লেখা গল্পগুলোতে প্রযুক্তি, কল্পনা ও মানবিকতার মেলবন্ধন অনন্যভাবে ফুটে উঠেছে।
জামশেদ জে ইরানি (১৯৩৬–২০২২)
“স্টিল ম্যান অব ইন্ডিয়া” নামে পরিচিত এই শিল্পপতি ছিলেন টাটা স্টিলের রূপকারদের একজন। ভারতের শিল্পায়নের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়।
মাক্স লিন্ডার (১৮৮৩–১৯২৫)
ফরাসি নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের কমেডির পথিকৃৎ। চার্লি চ্যাপলিন নিজেও তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। ইউরোপীয় সিনেমায় লিন্ডারের হাস্যরস ও অভিনয়শৈলী আজও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের অনুপ্রেরণা জোগায়।
আজকের দিনে প্রয়াত এই মহান ব্যক্তিত্বদের জীবন ও কর্ম আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। সংগীত থেকে বিজ্ঞান, সাহিত্য থেকে রাজনীতি— তাদের অবদান মানবসভ্যতার ইতিহাসে স্থায়ী অক্ষরে লেখা থাকবে। সমাজকাল তাঁদের প্রতি জানায় গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
-

 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													