নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে প্রশ্ন জামায়াত প্রতিনিধির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:১৬, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৪:০৮, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে প্রশ্ন জামায়াত প্রতিনিধির। ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে অংশ নিয়ে প্রণীত আচরণবিধির কয়েকটি দিক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিনিধি শিশির মনির। বিশেষ করে পোস্টার ব্যবহারে অসংগতি, আচরণবিধি লঙ্ঘনের শাস্তি আরোপের স্পষ্ট নিয়ম না থাকা এবং নির্বাচনী অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্ধারণ না হওয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এই সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি ইসির আচরণবিধির কয়েকটি ‘দ্বৈত দিক’ ও ‘আইনগত ফাঁকফোকর’ তুলে ধরেন। তার বক্তব্যে আচরণবিধির কিছু অনির্দিষ্টতা পরিষ্কারভাবে সামনে আসে।
পোস্টার ব্যবহারে ‘দ্বৈত নীতি’ প্রশ্নবিদ্ধ
আচরণবিধির ৭-এর ‘ক’ উপধারায় স্পষ্টভাবে “কোনো প্রকার পোস্টার ব্যবহার করা যাইবে না” বলা হলেও ৭-এর ‘ঘ’ উপধারায় পোস্টারসহ অন্যান্য প্রচারসামগ্রী ব্যবহারের ওপর আলাদা বিধিনিষেধ আরোপ করায় ইসির অবস্থানকে অসংগত বলে মন্তব্য করেন শিশির মনির।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “একদিকে বলছেন পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না, আবার অন্যদিকে পোস্টার সরানো যাবে না বা নির্দিষ্টভাবে সীমিত করা হয়েছে—এ দ্বৈত নীতি কেন?”
শাস্তি আরোপের এখতিয়ার অস্পষ্ট
আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হলেও—কর্তৃত্ব প্রয়োগ করবেন কারা, কোন আদালত এই শাস্তি দেবে—সে বিষয়ে নীরব আচরণবিধি। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিশির মনির।
তার বক্তব্য, “বিধিতে স্পষ্ট বলা নেই—কে শাস্তি আরোপ করবেন। কোন কোর্ট এর এখতিয়ার পাবে, তা উল্লেখ করা উচিত ছিল। এতে মনে হয়, ইসি নিজেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীন।”
এ ছাড়া কোনো প্রার্থীর পক্ষে অন্য ব্যক্তি অপরাধ করলে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে শাস্তির আওতায় আনার বিধানকেও তিনি আইনগতভাবে অসংগত বলে মন্তব্য করেন।
অভিযোগ নিষ্পত্তিতে নির্দিষ্ট সময়সীমার দাবি
নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির (আচরণবিধির ২৬) ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন শিশির মনির। তিনি বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পর ইসি কত সময়ের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবে—এ বিষয়ে বাধ্যতামূলক নির্দেশনা থাকা উচিত।
তার ভাষায়, “আমি অভিযোগ দিলাম, আপনি ডিসপোজ করবেন কি–না তার কোন সময়সীমা নেই। এতে শত শত অভিযোগ ঝুলে থাকতে পারে। তাই নির্দিষ্ট সময়সীমা—কত ঘণ্টা বা কত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি—এটি বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।”
এক মঞ্চে ইশতেহার পাঠ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব
প্রতীক বরাদ্দের পর রিটার্নিং অফিসারের আয়োজনেই সব প্রার্থীর উপস্থিতিতে ইশতেহার পাঠ ও আচরণবিধি প্রতিপালনের ঘোষণা দেওয়ার যে বিধান রয়েছে—তা বর্তমানে ‘ঐচ্ছিক’। শিশির মনির চান এটিকে বাধ্যতামূলক করা হোক।
তিনি বলেন, “আপনারা বলছেন—করতে পারবেন। আমার মতে এটি করা উচিত। বাধ্যতামূলক হলে নতুন প্রজন্ম গঠনমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখতে পাবে।”
