শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে আওয়ামী লীগ কি স্থবির হয়ে পড়বে?
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১:৪৮, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এতে জুলাই আন্দোলনের সমর্থকেরা উচ্ছ্বুসিত। তাদের এখন দাবি, শেখ হাসিনাকে ভারত দেশে সাজা কার্যকর করার। রায়ের ফলে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে জব্ধ করা গেছে বলেও মনে করছেন জুলাই আন্দোলনে সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই রায় পাত্তা দিতে চাচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ, এই রায় পূর্বপরিকল্পিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশোধ। আত্মপক্ষ সমর্পন সুযোগ না থাকা বিচারকে তারা একতরফা বলছেন। ফলে এই রায়কে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
রায়ের পরে তা প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা এই রায়কে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেছেন। রায় নিয়ে মানবাধিকার প্রসঙ্গে জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উদ্বেগও প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের কেউ কেউ বলছেন, শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের টকশোতে বলেছেন, জুলাইহত্যার বিচার করার জন্য যেভাবে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। আইন ও একজন মুক্তিযোদ্ধা দৃষ্টি থেকে বলছি। এই ট্রাইব্যুনালে যতো বিচারই হোক না কেন, একদিন না একদিন এই বিচার নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, রায়ের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও অ্যান্টি আওয়ামী লীগ এই রাজনীতিটা আরো নিষ্ঠুরতার দিকে যাবে। তার মতে, বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড যদি না মানা হয় তাহলে এ দেশের রাজনৈতিক যে বিভেদ তা আরো বাড়াবে। একদিকে আওয়ামী লীগ আরেকদিকে বাকিরা এই পোলারাইজেশনের রাজনীতি, এটা চলমান থাকবে। এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বরং এই ধারাটা বিলুপ্ত হবে এবং দেশের মধ্যে একধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হবে।
লন্ডনে বসবাসরত রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ রানা তার ফেসবুকে লিখেছেন, আমার মনে হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ড সম্ভবতঃ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে না হয়ে বরং তাকে বশে আনার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকবে। ইংরেজিতে যাকে আমরা বার্গেইনিং চিপবলি। কারা কার সাথে কী অর্জন করতে বার্গেইন করতে চাইছে, তা এক ভিন্ন আলোচনা, যা স্বতন্ত্রভাবে আলোচনার দাবী রাখে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম মনে করেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে আবার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা বা উত্থান এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে গুঞ্জনের অবসান এই রায়ের ফলে হয়েছে। সেই সাথে ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনীতি পরিচালনা সীমিত হয়ে পড়বে। বিবিসি বাংলাকে তিনি আরও বলেন, আবার এই রায়ে ভারতের জন্য একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। তারা যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সেটা ছিলো একেবারেই সাদামাটা। খুব পরোক্ষভাবে তারা কূটনৈতিক মারপ্যাচের কথাগুলো তারা বলেছে।
