সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ তিনজনের ৪ কোটি ৬৪ লাখ শেয়ার অবরুদ্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪:০৫, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তাঁর পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরও দুই ব্যক্তির নামে মেঘনা ব্যাংকে থাকা মোট ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৫টি শেয়ার অবরুদ্ধ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অবৈধ অর্থ ব্যবহার করে এসব শেয়ার কেনা হয়েছে—এমন প্রমাণ পাওয়ার পর আদালতের নির্দেশে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সিআইডির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পাশাপাশি তাঁর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং ভাইয়ের স্ত্রী ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ইমরানা জামান চৌধুরী–এর শেয়ারও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
অবৈধ অর্থে শেয়ার ক্রয়ের প্রমাণ
সিআইডির অনুসন্ধানে দেখা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব এবং তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন কাগুজে প্রতিষ্ঠান স্টিডফাস্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেডিং লিমিটেড–এর নামে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ২০০টি শেয়ার কিনেছিলেন। সে সময় এই শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
পরে স্টক ডিভিডেন্ড যোগ হয়ে মোট শেয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৬৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৫৫টি।
চাঁদাবাজি ও জালিয়াতির অর্থ দেশে আনা-নেওয়া
সিআইডি জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, জালিয়াতি ও সংঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ সংগ্রহ করেছেন। সেই অর্থের একটি অংশ বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হয়; পরে তা সিঙ্গাপুর ও দুবাই থেকে দেশে এনে বৈধ করার চেষ্টা করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে—২০২২ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে সিঙ্গাপুর ও দুবাই থেকে দেশে আনা হয় ২ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৪৪ মার্কিন ডলার।
অর্থগুলো অভিযুক্তদের সহযোগী আবুল কাসেম–এর মাধ্যমে ইউসিবি ব্যাংক এবং এনআরবিসি ব্যাংকের এফসি অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
এরপর ৬০ কোটি টাকা নগদ ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ইমরানা জামান চৌধুরী এবং স্টিডফাস্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেডিং লিমিটেডের নামে জমা দেওয়া হয়।
ওই অর্থ কমিউনিটি ব্যাংকের একটি বিশেষ অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে ৫৯.৯৫ কোটি টাকা মেঘনা ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনায় ব্যবহার করা হয়।
‘স্টিডফাস্ট’ প্রতিষ্ঠানটি কাগুজে—সিআইডির দাবি
সিআইডির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, স্টিডফাস্ট ম্যানেজমেন্ট ট্রেডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে উৎপল পাল ও পরিচালক হিসেবে নাসিম উদ্দিন মোহাম্মদ আদিলের নাম দেখানো হয়েছে। তারা দুজনই সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের কর্মচারী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
আদালতের আদেশ
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. সাব্বির ফয়েজ মঙ্গলবার সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসব শেয়ার অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মামলার তদন্তকে অগ্রসর করতে সংশ্লিষ্ট সম্পদ জব্দেরও অনুমতি দেওয়া হয়।
