সড়ক, রেল ও নৌ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির শঙ্কাজনক বৃদ্ধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১০, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
চলতি সময়ে সড়ক, রেল ও নৌ দুর্ঘটনায় প্রাণহানি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দুর্ঘটনার হার ৩৯.৫০ শতাংশ। এই সময়ে পথচারী হিসেবে ৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২.২২ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬২ জন (১৪.০৫ শতাংশ)।
নৌপথে ৯টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ৪ জন নিখোঁজ। রেলপথে ৪৬টি ট্র্যাক দুর্ঘটনায় ৪৩ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, এ তথ্য বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হয়েছে।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:
মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, ১৩৭ জন (৩১.০৬%)। এরপর রয়েছে থ্রি-হুইলার যাত্রী ১০৩ জন (২৩.৩৫%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৩৪ জন (৭.৭০%), বাসের যাত্রী ৩০ জন (৬.৮০%) এবং ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রলি আরোহী ২৪ জন (৫.৪৪%)। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস আরোহী ৭ জন (১.৫৮%) এবং রিকশা-বাইসাইকেল আরোহী ৮ জন (১.৮১%) প্রাণ হারিয়েছেন।
দুর্ঘটনার ধরন ও স্থান:
রিপোর্ট অনুযায়ী, দুর্ঘটনার মধ্যে ১৬৬টি (৩৪.১৫%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৪৮টি (৩০.৪৫%) আঞ্চলিক সড়কে, ৮১টি (১৬.৬৬%) গ্রামীণ সড়কে, ৮৭টি (১৭.৯০%) শহরের সড়কে এবং ৪টি (০.৮২%) অন্যান্য স্থানে ঘটেছে। দুর্ঘটনার ধরন অনুযায়ী ৯৯টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১৭টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সংঘটিত, ১০৩টি পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা, ৬০টি যানবাহনের পেছনে আঘাত এবং ৭টি অন্যান্য কারণে ঘটে।
সংশ্লিষ্ট যানবাহন:
ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রলি ও ড্রাম ট্রাকসহ বিভিন্ন লরি ২৫.৯১% দুর্ঘটনায় জড়িত। বাসের অংশগ্রহণ ১৩.৪০%, মোটরসাইকেল ২৬.১৬%, থ্রি-হুইলার ১৭.৯৫%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ৭.৮৩%, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার ৩.৯১%, বাইসাইকেল-রিকশা ২.০২% এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২.৭৮%। মোট ৭৯১টি যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত।
দুর্ঘটনার সময়:
ভোরে ৬.১৭%, সকালে ২৬.৩৩%, দুপুরে ১৫.৬৩%, বিকালে ১৭.৬৯%, সন্ধ্যায় ১০.৬৯% এবং রাতে ২৩.৪৫% দুর্ঘটনা ঘটে।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণ:
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা (১২১টি) এবং প্রাণহানি (১১২ জন) ঘটেছে। চট্টগ্রামে দুর্ঘটনা ২১.৩৯% এবং প্রাণহানি ২০.৮৬%, রাজশাহীতে ১১.৫২% দুর্ঘটনা ও ১২.৪৭% প্রাণহানি। সিলেটে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি সবচেয়ে কম, যথাক্রমে ২৬টি ও ২৪ জন। অন্যান্য বিভাগের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হারও উল্লেখযোগ্য।
নিহতদের পেশাগত পরিচয়:
নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৪, র্যাব সদস্য ১, বিজিবি সদস্য ১, শিক্ষক ১৪, সাংবাদিক ২, আইনজীবী ২, প্রকৌশলী ৩, ব্যাংক-বীমা কর্মকর্তা ৬, এনজিও কর্মী ৪, রাজনৈতিক নেতা ১১, স্থানীয় ব্যবসায়ী ১৮, বিক্রয় প্রতিনিধি ১৩, পোশাক শ্রমিক ৪, নির্মাণ শ্রমিক ২, প্রতিবন্ধী ২ এবং শিক্ষার্থী ৫১ জন।
দুর্ঘটনার মূল কারণসমূহ:
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও সড়ক, বেপরোয়া গতি, চালকের অদক্ষতা ও মানসিক-শারীরিক অসুস্থতা, তরুণদের অযত্নে মোটরসাইকেল চালানো, ট্রাফিক আইন না জানা বা মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ-এর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দুর্ঘটনার হার আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞরা ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, যানবাহন ও সড়কের মান উন্নয়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দিয়েছেন।
