বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

| ১ কার্তিক ১৪৩২

আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর মূল্যহীন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫:৪৯, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর মূল্যহীন

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা কোনোভাবেই অর্থবহ হবে না। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, সরকার যদি আইনগত ভিত্তি ও কার্যকর আদেশের নিশ্চয়তা না দেয়, তাহলে সনদে স্বাক্ষর করা “মূল্যহীন আনুষ্ঠানিকতা” ছাড়া কিছুই নয়।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি বলেন, “সংস্কার প্রস্তাবে কিছু দলের নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) রয়েছে। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার—যদি গণভোটের মাধ্যমে জনগণ সেই ভিন্নমতের বিষয়ে মত দেয়, তাহলে তবেই জুলাই সনদ কার্যকর হবে। আইনগত আদেশ ছাড়া কাগজে স্বাক্ষর অর্থহীন।”

নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের সময় যে টেক্সট তাদের দেখানো হয়েছিল, ঘোষণার সময় তা পরিবর্তন করা হয়। তার ভাষায়, “ঘোষণাপত্রের টেক্সট নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে। ঐতিহাসিক ন্যারেটিভ ও গণঅভ্যুত্থানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এতে জনগণ ও রাজনৈতিক দল উভয়কেই বিভ্রান্ত করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “যার আইনি মূল্য নেই, এমন আরেকটি প্রতীকী স্বাক্ষরের সাক্ষী হতে চাই না। আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চয়তা ছাড়া এই প্রক্রিয়া অর্থহীন।”

সরকারের কাছে তিনটি শর্ত পেশ
এনসিপির পক্ষ থেকে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের আগে সরকারের কাছে তিনটি স্পষ্ট শর্ত তুলে ধরা হয়—

১️.আইনি আদেশের খসড়া প্রকাশ:

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়া স্বাক্ষরের আগেই প্রকাশ করতে হবে। এই আদেশ জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায় অনুযায়ী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন।

২️.একসঙ্গে গণভোট:

সনদের ৮৪টি প্রস্তাব একসঙ্গে গণভোটে উপস্থাপন করতে হবে। নোট অব ডিসেন্ট থাকলেও তার আলাদা কার্যকারিতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন ও ভাষা আগেই চূড়ান্ত করে প্রকাশ করতে হবে।

৩️.সংবিধান সংস্কারের ক্ষমতা:

জনগণ যদি গণভোটে সনদ অনুমোদন করে, তবে পরবর্তী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের কনস্টিটিউট পাওয়ার দিতে হবে। সংস্কারকৃত সংবিধান হবে “সংবিধান ২০২৬” নামে পরিচিত।

নাহিদ ইসলাম বলেন, “এই তিনটি বিষয় পরিষ্কার না হলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এতে অংশগ্রহণ করা বা না করা—দুটিই সমান অর্থহীন। জনগণের সামনে বিষয়গুলো স্বচ্ছ না করে সনদে স্বাক্ষর আয়োজন করা ছলচাতুরী ছাড়া কিছু নয়।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক দল হিসেবেও আমাদের জানার অধিকার রয়েছে, সরকার কীভাবে সনদ বাস্তবায়ন করবে। জনগণকে অন্ধকারে রাখা যাবে না।”

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। আমরা এখনো নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা করছি। আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম ইসির পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করছে।”

জুলাই সনদ নিয়ে এর আগে একাধিক রাজনৈতিক দল নোট অব ডিসেন্ট জমা দিয়েছে। কেউ কেউ সনদের আইনি ভিত্তি, কেউবা গণভোট পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি তুলেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।”

এনসিপির দাবি অনুযায়ী, সনদ বাস্তবায়নের জন্য আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হলে এই ঘোষণাকে জনগণও প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে দেখবে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন