তাহলে কি চর দখল ও ভয়াবহ সহিংসতার নির্বাচন হতে যাচ্ছে
প্রকাশ: ১৬:৩৮, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
মঞ্জুরে খোদা টরিক
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আবারও বললেন, মানুষ নির্বাচন নিয়ে আস্থার সংকটে ভুগছেন। রাজনীতিকরাও নির্বাচনের কথা বলছেন, কিন্তু তারাও সন্দেহ মুক্ত নন। সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরাও বিভক্ত নানা মত দিচ্ছেন, কেউই দ্বিধামুক্ত নন! কেন সবাই দ্বিধাহীন নন, সেটাই নির্বাচন হওয়া না হওয়ার সবচেয়ে বড় সংকট।
গত বছর সলিমুল্লাহ খান সমকালের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘মানুষকে একবার আগুন থেকে খোলায়, আবার খোলা থেকে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। বাংলাদেশ এখন স্বৈরতন্ত্রের খোলা থেকে অজানাতন্ত্রের আগুনে পড়েছে।’ আমার মনে হয় না সলিমুল্লাহ খান এখন আর তার এই কথা বিশ্বাস করেন। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে তার যে বক্তব্য তা এই ধারায় যায় না।
অন্যদের মতো আমিও শুনি এই প্রশ্ন নির্বাচন কি হবে? নির্বাচন নিয়ে আমি আমার আগের অবস্থানেই আছি কিনা? হ্যাঁ আগের অবস্থানেই আছি। নির্বাচন বলতে যা বোঝায় সেটা হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রহণযোগ্য, সেটা হবে না। আর যদি সেই ফেব্রুয়রিতে নির্বাচন হয় তাহলে তা হবে—চর দখলের ও ভয়াবহতম সহিংসতার নির্বাচন। সেটা হলে তো আর নির্বাচন হলো না...। আর নির্বাচন না হওয়া ও থামিয়ে দেওয়ার একটা তৎপরতা/ষড়যন্ত্র তো আছেই।
কেন এই শঙ্কা, ভাবনা হৃষ্টপুষ্ট ও প্রবল হচ্ছে, সে কথা এই চারটি পয়েন্টে রুহিন হোসেন প্রিন্স লিখেছেন। করণীয় কি, তিনি তার আপাত বিকল্পের কথাও বলেছেন।
‘১। দেশে এক অস্থির পরিস্থিতি চলছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় দেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদসহ সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী দেশসমূহের আধিপত্য চলছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তি তাদের স্বার্থ উদ্ধারে তৎপর।
২। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছায়ায়, কোথাও কোথাও প্রত্যক্ষ ভূমিকায় দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী এসব তৎপরতা চলছে।
বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে ‘গিনিপিগ’ বানানো হয়েছে। এখন দেশকে ‘গিনিপিগ’ বানানোর চেষ্টা চলছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট নিশ্চিত করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে জনগণের সাথে ‘কানামাছি’ খেলছে।
৩। এখন এই আলোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে যে, ক্ষমতার খেলা নাকি দোহা, দিল্লি, পিন্ডি, ওয়াশিংটনসহ অন্যান্য এলাকা থেকে পরিচালিত হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন নির্বাচন, গণতন্ত্র—এসব বিষয়ে সাধারণ মানুষের আর ভূমিকা নেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ আরেকটা সংকটে পড়বে।
৪। এ অবস্থার অবসানে জনগণকে সচেতন সংগঠিত করে জনগণের ঐক্য ও নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে। একাজ না করতে পারলে শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনের খেলা চলতে থাকবে। ব্যবস্থা বদল হবে না। গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন দেশ গড়ে উঠবে না। কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী, ফ্যাসিস্ট প্রবণতা নতুন নতুন চেহারায় বহাল থাকবে।’
লেখক: গবেষক
* মতামত লেখকের নিজস্ব
