যেখানেই থাকুন, বিচারে বাঁধা নেই: আদালতের পর্যবেক্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫:১৮, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিক। কোলাজ ছবি
আবাসন সুবিধা থাকার পরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করে ভুয়া হলফনামা তৈরির মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ নেন। তারা পৃথিবীর যেখানে অবস্থান করুন, বিচারে বাধা নেই।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলার রায়ে এই পর্যবেক্ষণ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম। সোমবার (১ ডিসেম্বর) এই রায় ঘোষণা করা হয়।
এসময় আদালত বলেন, শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সবাইকে প্রভাবিত করে মিথ্যা হলফনামা, তথ্য গোপন এবং জালজালিয়াতির মাধ্যমে বিধিবিধান না মেনে প্রত্যেকের নামে প্লট বরাদ্দ নেন।
আদালত বলেন, ১৭ আসামির মধ্যে শুধু রাজউকের সাবেক সদস্য খুরশীদ আলম আদালতে উপস্থিত হয়েছেন। এছাড়া কেউ মামলা মোকাবিলা করেনি। অন্য কাউকে মামলা মোকাবিলা করতে দেওয়া হয়নি, প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য পলাতক আসামিদের বরাবর বিভিন্ন তারিখে পত্রিকায়, গেজেটে বিজ্ঞাপ্তি দেওয়া হয়। সুতরাং বলার অবকাশ নেই, আসামিদের আদালতে উপস্থিত হতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
আদালত আরও বলেন, টিউলিপ বিদেশে থেকে সামাজিকমাধ্যমে বিভিন্ন এপসের মাধ্যমে প্রভাবিত করেছেন। এমনকি তারা এ মামলার অন্য আসামদির প্রভাবিত করেন। কর্মকর্তারাও বিধিবিধান অমান্য করে প্লট বরাদ্দ দিতে ফাইল প্রস্তুত করেন।
এ মামলায় শেখ রেহানার সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। টিউলিপ সিদ্দিকের দুই সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলাটি করেছিল গত ১৩ জানুয়ারি। দুদকের অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন দল লেবার পার্টির এমপির ক্ষমতা ব্যবহার করে মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান মুজিবের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেন। তিন জনই পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন।
তবে এই মামলায় শুধু রেহানার প্লট পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যে কারণে এ মামলায় আজমিনা ও রাদওয়ানকে আসামি করেনি দুদক। দুজনকে অন্য দুটি মামলায় আসামি করেছে সংস্থাটি।
এ মামলার মোট আসামি ১৭ জন। শেখ হাসিনা, রেহানা ও টিউলিপ ছাড়া এই মামলার অন্য ১৪ আসামি হলেন– জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, একই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক চার সদস্য—মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন ও মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী; রাজউকের সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। ১৭ আসামির মধ্যে খুরশীদ আলম কারাগারে আছেন।
প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় গত ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার ২১ বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
