ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হকার–ভবঘুরে’ উচ্ছেদে বিতর্ক, ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
প্রকাশ: ০৮:৩৯, ২৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৮:৫২, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে হকার ও ভবঘুরে উচ্ছেদ নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার রাতে ডাকসুর নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সঙ্গে যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালান। তারা দাবি করেন, ক্যাম্পাসে কিছু হকার ও ভবঘুরে মাদকাসক্ত এবং তাদের কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এই অভিযানের প্রতিবাদে শনিবার রাতে হকার ও ছোট দোকান পরিচালনাকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা জানিয়ে দেন, দীর্ঘ ২০-৩০ বছর ধরে তারা ক্যাম্পাসে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। হঠাৎ তাদের দোকান উচ্ছেদ করলে তারা কীভাবে জীবনযাপন করবেন, তা বোঝা কঠিন।
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো এই উচ্ছেদ অভিযানের সঙ্গে একমত নয়। তাদের বক্তব্য, এই ধরনের উচ্ছেদ কার্যক্রম গত বছর ৫ আগস্ট শুরু হয়েছিল। তখন এক দল শিক্ষার্থী টিএসসির চায়ের দোকানসহ ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করেছিলেন। পরে বেশিরভাগ দোকান পুনরায় বসানো হয় এবং অনেক দোকান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নিবন্ধন লাভ করে। এখন ডাকসুর নেতারা আবারও হকার ও ভবঘুরে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছেন। শনিবার রাতে দোকানপাট ভাঙচুর ও দোকানিদের মারধরের ঘটনাও ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নেতা ইসরাত জাহান বলেন, শনিবার রাতে তিনি রিকশায় দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসির দিকে আসার সময় কিছু ভাঙচুর হওয়া ফুড কোর্ট রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। দোকানিরা তাদের মালপত্র ফেরত পেতে চেষ্টা করছিলেন। তখন ডাকসুর নেতারা জোরপূর্বক মালপত্র নেওয়ার চেষ্টা করেন। বয়স্ক দোকানিরাও তাদের হাত-পায়ে ধরে প্রতিরোধ করছিলেন। ইসরাত জাহান বলেন, ‘মাঝরাস্তায় কারো শারীরিক নির্যাতন দেখতে চুপ থাকা যায় না, তাই আমি তাদের বিক্ষোভে সংহতি জানিয়েছি।’
উচ্ছেদ অভিযানে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক জুবায়ের বিন নেছারী ও সদস্য সর্বমিত্র চাকমা সামনের সারিতে ছিলেন। জুবায়ের জানান, ক্যাম্পাসে অনিবন্ধিত ভ্রাম্যমাণ দোকান এবং অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী ভবঘুরে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েক বছর ধরে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান বসে আসছে। ১৩ মে গভীর রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হন। এরপর পুলিশ অনেক দোকান উচ্ছেদ করে। তবে কিছু দোকানিরা টিএসসি ও আশপাশে ব্যবসা পুনরায় শুরু করেন।
শনিবার রাতে টিএসসি-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক জুবায়েরকে সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়াতে দেখা যায়। জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক অভিযোগ করেন, অভিযানের সময় তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করা হয়। জুবায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মীরের বক্তব্য ভিত্তিহীন এবং নাটকীয়।
জুবায়ের দাবি করেন, ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কিছু চক্রকে দমন করাই তাদের লক্ষ্য। ডাকসুর সহসভাপতি আবু সাদিক কায়েমও ফেসবুকে লিখেছেন, ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে বসা চক্রকে উচ্ছেদ না করে তারা ক্ষান্ত হবেন না।
ডাকসু নেতাদের শনিবারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ডাকসুর গঠনতন্ত্রটা তো কোথাও দেখি না। কেউ শেয়ার করবেন, দেখি কোথায় লেখা আছে যে ডাকসুর নামে গুন্ডামি জায়েজ!’
উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা আমরা জোরদার করব। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু প্রক্টোরিয়াল টিমের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আমরা সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা কামনা করছি এবং সব অংশীজনের সঙ্গে নিয়েই নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।’
