এনসিআরবি ২০২৩ রিপোর্ট
ভারতে বিদেশি বন্দি বেশি পশ্চিমবঙ্গে, ৮৯% বাংলাদেশি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২২:১০, ৫ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৩:১৯, ৬ অক্টোবর ২০২৫

ছবি : সংগৃহীত
ভারতের কারাগারগুলোতে থাকা বিদেশি বন্দিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে। সম্প্রতি প্রকাশিত ভারতের জাতীয় অপরাধ নথি ব্যুরোর (এনসিআরবি)-২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে থাকা বিদেশি বন্দিদের মধ্যে ৮৯ শতাংশই বাংলাদেশি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের কারাগারে ৬ হাজার ৯৫৬ জন বিদেশি বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫০৮ জন রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে, যা মোট বিদেশি বন্দির ৩৬ শতাংশ।
এই বিদেশি বন্দিদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি—অধিকাংশই অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ বা সীমান্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে আটক হয়েছে।
আজ রবিবার (৫ অক্টোবর) ভারতের একাধিক গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।
রিপোর্টে বলা হয়, বিচারাধীন বন্দিদের বড় একটি অংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে মোট ২৫ হাজার ৭৭৪ জন বন্দির মধ্যে ৯ শতাংশ ছিল বিদেশি—যার মধ্যে ৭৭৮ জন দোষীসাব্যস্ত এবং ১ হাজার ৪৪০ জন বিচারাধীন।
ভারতে বিদেশি বন্দির হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের পরেই রয়েছে মহারাষ্ট্র (৭৭৩ জন), দিল্লি (৭৫১ জন) ও উত্তরপ্রদেশ (৪৮১ জন)।
বছরওয়ারি পরিসংখ্যান
বিদেশি বন্দিদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে।
- ২০২১ সালে দোষী ৩২৯ জন, বিচারাধীন ১,১৭৯ জন
- ২০২২ সালে দোষী ৪৭১ জন, বিচারাধীন ১,৪২৪ জন
- ২০২৩ সালে দোষী ৭৯৬ জন, বিচারাধীন ১,৪৯৯ জন
এই ধারা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে আটক ও বিচার প্রক্রিয়া ক্রমেই বাড়ছে।
সীমান্ত ও নিরাপত্তা ইস্যু
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪,৯০৬ কিলোমিটার, যার অর্ধেকেরও বেশি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত। সীমান্তের বিস্তীর্ণ অঞ্চল অরক্ষিত ও দুর্বলভাবে পাহারায় থাকায় অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
তাদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি বন্দির সংখ্যা বেশি হওয়ার এটি একটি স্বাভাবিক কারণ।
বিচারব্যবস্থার জটিলতা
আইনজীবীদের মতে, বিচারাধীন বন্দিদের সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ—
- অভিযুক্তদের পক্ষে যোগ্য আইনজীবী না পাওয়া
- আদালতের অতিরিক্ত মামলা-চাপ
- বিচারক সংকট ও দীর্ঘসূত্রতা
ফলে বহু বন্দি বছরের পর বছর বিচার শেষ না হতেই কারাগারে পড়ে থাকছেন।
ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি
রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ৬০টি কারাগারে ধারণক্ষমতা ২১,৪৭৬ জনের, অথচ সেখানে বন্দি রয়েছে ২৫,৭৭৪ জন। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার ১২০ শতাংশ বন্দি সেখানে অবস্থান করছে—যা পরিস্থিতিকে “অত্যন্ত শোচনীয়” বলে উল্লেখ করেছে এনসিআরবি।
নারী বন্দিদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র—রাজ্যের একমাত্র নারী কারাগারে বন্দি থাকার হার ১১০.২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সীমান্ত নিরাপত্তা, আইনগত সহায়তা এবং বিচার প্রক্রিয়ার সংস্কার ছাড়া এ চিত্রের উন্নতি সম্ভব নয়। পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে বাংলাদেশি বন্দিদের উপস্থিতি শুধু আইন নয়, দুই দেশের সীমান্ত-পরিচালনা ও মানবাধিকার প্রশ্নেও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ সীমান্তে মানবিক, আইনি ও কূটনৈতিক জটিলতার এই বাস্তবতা ভবিষ্যতে দুই দেশের সহযোগিতামূলক নীতির ওপর নির্ভর করবে। নিয়মিত সীমান্ত সংলাপ ও দ্রুত ন্যায়বিচারই হয়তো এই সমস্যার টেকসই সমাধান দিতে পারে।