বিএমইউতে সেমিনারে তথ্য
মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় বৃহত্তম কারণ ফুসফুসের রোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:৪৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২০:১৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সারা বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষ ফুসফুসজনিত বক্ষব্যাধি রোগে আক্রান্ত এবং বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় বৃহৎ কারণ সিওপিডি বা দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসের রোগ।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব ফুসফুস দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এই তথ্য জানানো হয়।
সেমিনারে চিকিৎসকরা বলেন, এই রোগের লক্ষণ হলো- কাশি (বিশেষ করে সকালে), দীর্ঘদিন ধরে কফ উঠা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, হাঁটলে বা কাজ করলে দ্রুত হাঁপিয়ে যাওয়া, শ্বাসের সময় শোঁ শোঁ শব্দ, বুকে চাপ অনুভব করা।
এই রোগের কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা জানান, ধূমপান (প্রধান কারণ), ধুলাবালি ও রাসায়নিক পদার্থে দীর্ঘদিন এক্সপোজার, রান্নার ধোঁয়া (বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে) ও জেনেটিক কারণে এই রোগ হয়ে থাকে।
সেমিনারে বিএমইউয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের দেশে পালমোনারি হাইপারটেনশন চিকিৎসায় নতুন আপডেট ড্রাগ ব্যবহার করা যাবে। তবে নতুন ড্রাগ ব্যবহারের আগে জানতে হবে কি মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
চেস্ট অ্যান্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মহাসচিব সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল বলেন, সারা বিশ্বের মানুষের মৃত্যুর ৫টি প্রধান কারণের ৪টি প্রধান কারণই হল রেসপিরিটোরিজনিত।
এই চিকিৎসক জানান, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, এজমা, সিওপিডি রোগের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের জন্য নতুন গাইডলাইন প্রনোয়নের কাজ করছে চেস্ট অ্যান্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
বিএমইউয়ের রেসপিরিটোরি মেডিসিন বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মানাল মিজানুর রহমান তার ‘ডিপার্টমেন্ট অব রেসপিরিটোরি মেডিসিন- হাইলাইটস অ্যান্ড হরিজন’ শীর্ষক নিবন্ধে বলেন, সারা বিশ্বের ৩০ শতাংশ মানুষ বক্ষব্যাধি রোগে আক্রান্ত, সারা বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় বৃহৎ কারণ সিওপিডি।
এই চিকিৎসক বলেন, গত ৯ বছরের মধ্যে মাত্র ৩১ দিন সারা বিশ্বের বায়ু দূষণমুক্ত ছিল। ফলে এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
বিএমইউতে আছে চিকিৎসা
সেমিনারে জানানো হয়, বিএমইউতে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগের চিকিৎসায় রেসপিরিটোরি মেডিসিন বিভাগে বিভিন্ন ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি- ব্লকের -১৫১২ কক্ষে প্রতি শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্লিপ ও পালমোনারি হাইপারটেনশন ক্লিনিক, সোমবার একই কক্ষে একই সময়ে ডিফিউজ প্যারেনকাউমাল লাং ডিজিজ (ডিপিএলডি) ও প্রতি বুধবার একই কক্ষে ডিফিকাল্ট অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ ক্লিনিকের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরিটোরি বিভাগে প্রতিনিয়িত বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আসা রেফারেল রোগীদেরও চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
আরও যারা উপস্থিত ছিলেন
দিবসটি উপলক্ষে যৌথভাবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করে বিএমইউ’র বক্ষব্যাধি বিভাগ ও চেস্ট অ্যান্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সেমিনারটি বিএমইউ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরীন আখতার ও মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগে. জেনারেল ডা. আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ ফরহাদ, পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সহযোগী অধ্যাপক ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, সহকারী প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপ ডা. মো. আদনান হাসান মাসুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরিটোরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদ ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন রেসপিরিটোরি মেডিসিন বিভাগের ফেইজ-বি রেসিডেন্ট ডা. তাজকিয়া তাসনিম আহম্মেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরিটোরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সম্প্রীতি ইসলাম।
বৈজ্ঞানিক সেমিনারে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেব উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস-উর রহমান, চেস্ট অ্যান্ড হার্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের থোরাসিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল আনাম কিবরিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরিটোরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজাশিষ চক্রবর্তী।
